রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে উপেক্ষিত ওমর সানী

সিনেমার কাজ না থাকলেও ফেসবুকেই এখন তিনি দারুণ সরব। ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে দেশের শোবিজ, ক্রীড়া, সমাজ, ধর্মসহ এমন কিছু নেই, যা নিয়ে তিনি স্ট্যাটাস দেন না। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম থেকে ব্যাটসম্যান তামিম বাদ পড়লে রীতিমত রেগে যান ওমর সানী। বেশ কয়দিন প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং তামিমকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান...
মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নব্বই দশকে যে কয়েকজন অভিনেতা দর্শকপ্রিয় হিসেবে পরিচিত, তাদের অন্যতম ওমর সানী। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ ওমর সানী। দর্শকের কাছে ওমর সানী নামেই খ্যাত। ১৯৯২ সালে নুর হোসেন বলাইর 'এই নিয়ে সংসার' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে। ১৯৯৪ সালে দিলীপ বিশ্বাসের 'দোলা' চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। একদিকে জীবনের প্রথম সিনেমাটি করলেন 'এই নিয়ে সংসার' অন্যদিকে তার পরের সিনেমাটিই করলেন 'দোলা'। কাকতালীয় হলেও সত্য যে, সানীর জীবনের প্রথম করা এই দুটি সিনেমায় তার ব্যক্তিজীবনেও দারুণ প্রভাব ফেলে। জীবনের এই দ্বিতীয় সিনেমাটিতেই জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন মৌসুমীর সঙ্গে সানী। 'এই নিয়ে সংসার' এবং 'দোলা' এই দুটি ঘটনা যেন রূপকের মতো হয়ে ধরা দিল সানীর জীবনে। ফলে ওই দুটি সিনেমার সমন্বয়ে যেন তাদের বাস্তবজীবনেও ধরা দিল 'এই নিয়ে সংসার' এবং 'দোলা'।

সেই সূত্রে সানী ব্যবসাসফল সিনেমার অভিনেতাই নন, পাশাপাশি একজন সফল অভিনেত্রী মৌসুমীর সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অধিকারীও। মোহাম্মদ ওমর সানী এবং আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী নামের এই বৈবাহিক জুটি বলতে গেলে দেশের সিনেমায় প্রায় বিরলই। যদিও কিছুদিন আগে একটা অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে সম্পর্কটি টলমলায়মান হয়ে পড়েছিল। সফল দম্পত্তি বলেই তো এ নিয়ে তখন গোটা দেশে হালকা-মাঝারি ভূমিকম্প বয়ে যায়। কিন্তু সম্পর্কটি আগে থেকেই অত্যন্ত মজবুত ভিতের ওপর থাকায় সেটা আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয়নি। দুইজনেই সংযত হওয়ায় আগের মতোই সুখের সংসার বিরাজ করছে।

ফলে একই পস্ন্যাটফর্মের তারকাদম্পত্তি হিসেবেও আদর্শ হয়ে থাকবেন তারা। ইতোপূর্বে একই পস্ন্যাটফর্মের হিসেবে এ রকম আজিম (প্রয়াত)-সুজাতাকে দেখা গেছে। তবে পরবর্তী প্রজন্মের হিসেবে সানী-মৌসুমী একেবারেই অন্যরকম।

শোবিজের বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মে কাজ করা অনেকই স্বামী-স্ত্রী দম্পতি আছে। কিন্তু নায়ক-নায়িকা হিসেবে একই পস্ন্যাটফর্মের জুটি হিসেবে স্বামী-স্ত্রী এ দেশে খুব বেশি নেই। যাও হয়েছে, বেশির ভাগই ভেঙে গেছে বা ভেঙে যাচ্ছে। এতেও বোঝা যায়, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অভিনয়শিল্পীরা নিজেরাই আসলে তাদের প্রফেশনের ওপর কতখানি শ্রদ্ধাশীল।

ওমর সানী-মৌসুমী জুটি শুধু ইন্ডাস্ট্রির প্রতিই শ্রদ্ধাশীল থাকেননি, নিজেদের দাম্পত্যজীবনের ওপরও শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন। সে জন্যই স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে উভয়েই যারা শোবিজের সঙ্গে যুক্ত- তাদের দাম্পত্যজীবনে বিয়ে ভাঙন যেখানে চিরপরিচিত ডাল-ভাতের মতো ঘটনা, সেখানে ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে 'এই নিয়ে সংসার' হিসেবে সুখী দাম্পত্য ধরে রেখেছেন। ধরে রেখেছেন তার সেই 'দোলা' ছবিরই স্মারক হিসেবে পাওয়া দুটি বড় সন্তান যেন বিব্রত না হয় বা অসম্মানিত না হয়, সেটারও সুরক্ষায়। এমন কঠিন দায়িত্বশীলতার পরিচয় আজকাল শোবিজে কয়জনের মধ্যে পাওয়া যাবে?

শুধু তাই নয়, যখন থেকে ওমর সানী সিনেমায় অনিয়মিত বা প্রায় অর্ধ বেকার হয়ে পড়েন তখনো পূর্ণ ব্যস্ত অভিনেত্রী স্ত্রী মৌসুমীকে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। সুখী বাবা হয়ে সন্তান কোলে নিয়ে তার পিছে পিছে ঘুরেছেন। এ নিয়ে কোনো হীনমন্যতায় ভোগেননি। কতদিন এই চিত্র সহকর্মীরা সচক্ষে দেখেছেন। যেটার জন্য বাঙালির চিরাচরিত প্রকৃতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। যা একই পস্ন্যাটফর্মের হিসেবে দেশের চলচ্চিত্রে এমন জুটি দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ ওমর সানীর চলচ্চিত্রে বলতে গেলে কাজ নেই। কিন্তু তাদের সুখের সংসার তো আছে। কাজহীন অবস্থায় এটাই বা কয়জনের থাকে? সে ক্ষেত্রে ওমর সানী-মৌসুমী জুটি শুধু এ দেশের চলচ্চিত্রের ইন্ডাস্ট্রির জন্যই না, পরিবার, সমাজ, জীবন- প্রতিটি সেক্টরের জন্যই অনুকরণযোগ্য মানুষ। অনেকেই বলেন, যদি এমন দাম্পত্য চলচ্চিত্রের বাকি সবাইর মাঝে থাকত, তাহলে ইন্ডাস্ট্রিটাও বাইরের সমাজের কাছে এত বদনামের ভাগিদার হতো না। দেশের মানুষ ইন্ডাস্ট্রির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকত।

নব্বই দশকের নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে ডাকাবুকো টাইপের অভিনেতা ওমর সানী। তিনি যে 'ডাকাবুকো' ছিলেন এ কথা তিনি নিজেই নিজের সম্পর্কে কথাটি মাঝে মাঝে বলেন এবং যেন বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গেই বলেন।

ডাকাবুকো টাইপের বলেই হয়ত যখন নায়ক হিসেবে কাজ কম পাচ্ছিলেন তখন নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করেন খল নায়ক হিসেবে। অভিনয় করেন 'ওরা দালাল', 'ক্ষমতার গরম', 'খালাস' ইত্যাদি ছবিতে। দর্শকের সাড়া ভালোই পাচ্ছিলেন। তবে যেখানে মিশা সওদাগর একচেটিয়া রাজত্ব করছেন, সেখানে বছরে অল্প কিছু সিনেমার 'খল নায়ক' হওয়াটা যেন ডাকাবুকো সানীর জন্য সম্মানজনক হলো না। ফলে খল নায়ক হওয়ার চিন্তা বাদ দেন। সম্প্রতি দুই বছর পর আবার এমডি ইকবাল পরিচালিত একটি সিনেমার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরেছেন ওমর সানী। সিনেমাটির নাম 'ডেড বডি'। এতে এক আধ্যাত্মিক চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। সম্প্রতি ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ছবিটির কাজ। দীর্ঘদিন পর আবার ছবিতে ফেরা প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, 'অনেক দিন কাজ করি না। নায়ক থেকে ভিলেন চরিত্রে কাজ শুরু করেছিলাম। দর্শকের সাড়াও পেয়েছি। কিন্তু আমার মেয়ে চায়নি আমি খলনায়ক চরিত্রে কাজ করি। তাই মেয়ের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে এই চরিত্র থেকে সরে এসেছি। অনেক দিন সিনেমায় কাজ করা হয়নি। এই চরিত্র একটু অন্য রকমের, তাই কাজটি করছি।' কিন্তু এক সময়ের তুমুল ব্যস্ত অভিনেতাকে কয়েক বছর পরপর অনিয়মিত ছবি করলে বাকি সময়টায় কী করেন?

সিনেমার কাজ না থাকলেও ফেসবুকেই এখন তিনি দারুণ সরব। ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে দেশের শোবিজ, ক্রীড়া, সমাজ, ধর্মসহ এমন কিছু নেই, যা নিয়ে তিনি স্ট্যাটাস দেন না। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম থেকে ব্যাটসম্যান তামিম বাদ পড়লে রীতিমত রেগে যান ওমর সানী। বেশ কয়দিন প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং তামিমকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে