শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
৬০ পৌরসভা নির্বাচন

বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্যেও উৎসবমুখর ভোট

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে রাজশাহীর আড়ানী পৌর নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ছবিটি শনিবার রাজশাহীর ফুলমন নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তোলা -পিবিএ

ভোটারদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীর বিজয়ের আভাস পাওয়া গেছে। কয়েকটি এলাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র ও বিএনপির চার প্রার্থী। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। অধিকাংশ পৌরসভায় বিপুল ভোটে জিতেছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা।

তবে কয়েকটি এলাকা ও কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের খবর পাওয়া গেছে। ৬০ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২২১ প্রার্থী।

ফেনীর দাগনভূঁঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে। ওই কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে চারজন আহত হন। বাগেরহাটের মোংলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এক মেয়রপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

যায়যায়দিনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণের শুরু থেকে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট চলে। তবে কোথাও কোথাও বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়, এজেন্টকে মারধর, বিএনপির চিহ্নিত ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়।

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গত দুদিনে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও শনিবার সেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের আগের রাতে সেখান থেকে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই অবস্থা নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায়ও। সেখানকার ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই ও মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল কাদের ধারাবাহিক অভিযোগ করলেও শনিবার ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে 'ঘাড়ধাক্কা' খাওয়ার পর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। বেলা দেড়টার দিকে পৌরসভার পূর্ব টেংরি

\হএলাকায় নিজবাড়ি থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন। বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মো. জুলফিকার আলী ভোট বর্জন করেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শেখ আবদুর রহমান। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নুরুল মিলস্নাত। বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক ভোট বর্জন করেন। তিনি এই নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী শাহ আলমকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের এএসপি আল মামুন তথ্য নিশ্চিত করেন। বেলা দুইটায় আটক করা হয় তাকে। কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

ফেনীর দাগনভূঁঞার একটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের মনোনীত ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার একটি কেন্দ্রে দুই মেয়র পদপ্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি ও অন্য একটি কেন্দ্রে মেয়র পদপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দুপুরে ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান কেন্দ্রের বাইরে গাড়ি রেখে ভেতরে যান। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন তার গাড়ি ভাঙচুর করে চলে যান।

দ্বিতীয় ধাপের ৬০টির মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়।

৬০ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ৭৪৫ এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।

ভোট হওয়া পৌরসভাগুলো

দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উলস্নাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাঁথিয়া (ব্যালট), ঈশ্বরদী (ব্যালট) ও সুজানগর (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাঁকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দুয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিলস্নার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঁঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে