শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উইন্ডিজদের বাংলাওয়াশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার উইন্ডিজের বিপক্ষে কাঙ্ক্ষিত ফিফটি তুলে নেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন মুশফিক -বিসিবি

দশ মাসের করোনা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সিরিজ প্রত্যাশিত সাফল্যে রাঙাল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ (৩-০) করে আইসিসি সুপার লিগের পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট নিজেদের করে নিয়েছে টাইগাররা। সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ১২০ রানের বড় ব্যবধানে হারায় তামিম ইকবালের দল। স্বাগতিকদের দেওয়া ২৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪.২ ওভারে সফরকারিরা গুটিয়েছে ১৭৭ রানে।

আগের দুটি ম্যাচের মতো তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৯৮ রানের বড় লক্ষ্যের বিপরীতে জয়ের লক্ষ্যে না হলেও উইন্ডিজকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোভম্যান পাওয়েল। তারপরেও শেষ রক্ষা হলো না তাদের। ৪৭ রানে ব্যাট করতে থাকা ক্যারিবিয়ানদের এই ব্যাটসম্যানকে সৌম্য সরকার সাজঘরে ফেরানোর পরেই দ্রম্নতই গুটিয়ে গেছে সফরকারিরা। তাতে বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডেতে পেয়েছে ১২০ রানের বড় জয়। এ নিয়ে ১৪তম হোয়াইটওয়াশের নজির গড়েছে টাইগাররা। হোয়াইটওয়াশের পাশাপাশি এই জয় দিয়েই আবার ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা অষ্টম জয় তুলে নিয়েছে তামিম ইকবালরা।

ওয়ানডেতে তিনবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে এটিই প্রথম। আগের দু'বার ছিল উইন্ডিজের মাটিতে। ক্যারিবীয়দের টাইগাররা প্রথম হোয়াইটওয়াশ করে ২০০৯ সালে।

\হসেবারও তাদের প্রথমসারির ক্রিকেটাররা খেলেননি। ২০১৪ সালে দুর্বারশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। সে দলে ছিলেন ক্রিস গেইল, ড্যারেন ব্রাভো, প্যারেন স্যামি, কাইরন পোলার্ড, মারলন স্যামুয়েলসদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।

এবার সিরিজের ফল ৩-০ হবে সেটি প্রত্যাশিতই ছিল! তবে কাজটা এত সহজ হবে সেটি ভাবা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নির্ভার থেকেই উইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে ছাড়ল টিম টাইগার্স। সফরকারী দলের ৯ ক্রিকেটারের অভিষেকের সিরিজ হেসেখেলেই জিতেছেন তামিম-সাকিবরা। শতভাগ সাফল্যে শেষ করেছেন ওয়ানডে অভিযান। টাইগারদের সামনে এবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউলস্নাহ। বরাবরই ভালো কিছুর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এ চার তারকা জ্বলে ওঠেন খুব কম সময়ই। উইন্ডিজের বিপক্ষে এদিন চার তারকাই জ্বলে উঠেছেন। চারজনই তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তাতে উইন্ডিজকে বড় লক্ষ্যই ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা। এরপর বোলারদের সৌজন্যে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দলটি।

এদিন বাংলাদেশের এ চার সিনিয়র তারকার তিনজন তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউলস্নাহ করেছেন ৬৪ রান করে। মাহমুদউলস্নাহ অবশ্য অপরাজিত থেকেছেন। আর সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এ চার তারকা একসঙ্গে ফিফটি করেছিলেন। সেবার ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তামিম। মাহমুদউলস্নাহ ৬২, মুশফিক ৬০ ও সাকিব ৫২ রান করেছিলেন। এদিন উইন্ডিজের বিপক্ষে আবারও জ্বলে ওঠে এ তারকাদের ব্যাট।

মিরপুরে আগের দুই ম্যাচেই দেড়শ করতে পারেনি উইন্ডিজ। সেই দলটির সামনে গতকাল ছিল ২৯৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর সে চ্যালেঞ্জে শুরু থেকেই চাপে ছিল দলটি। আর শুরুতে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বড় চাপে ফেলে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৭ রানেই দারুণ এক ডেলিভারিতে কিজর্ন ওটলিকে উইকেটলক্ষক মুশফিকের তালুবন্দি করেন এ পেসার। এরপর আরেক ওপেনার সুনিল আমব্রিসকেও ফেলেন এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে। এরপর ক্যারিবিয়ান শিবিরে আঘাত হানেন আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কাইল মেয়ার্সকে এলবিডাবিস্নউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এনক্রুমাহ বনার। রানের গতি সচল না থাকলেও ১১ ওভার ব্যাট করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ২২ রানের এ জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। এরপর বনারকেও তুলে নেন তিনি। উইন্ডিজ তখন একশ রানও ছুঁতে পারেনি। এরপর রভমান পাওয়েল এক প্রান্তে চেষ্টা চালিয়ে যান। ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু সৌম্যর বলে এলবিডবিস্নউর ফাঁদে পড়লে কার্যত শেষ হয়ে যায় তাদের আশা। এরপর রেমন রিফার, আলজেরি জোসেফদের ব্যাট কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। আর ইনজুরি থেকে ফেরার পর এদিন দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৫১ রানের খরচায় পেয়েছেন ৩টি উইকেট। এছাড়া মুস্তাফিজ ও মিরাজ পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।

এর আগে সাগরিকায় দিনের শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না বাংলাদেশের জন্যও। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে শুরুতে সংগ্রাম করতে হয় টাইগারদের। দলীয় ৩৮ রানেই দুই উইকেটের পতন। লিটন দাস তো বিদায় নেন খালি হাতে। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি। তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম। যদিও নিজের প্রথম বলেই বিদায় নিতে পারতেন সাকিব। মেয়ার্সের অফ স্টাম্পে রাখা বল লেগে ঘোরাতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য তা ধরতে পারেননি মেয়ার্স।

সে যাত্রায় বাঁচলেও রানের জন্য প্রচুর সংগ্রাম করতে হয় সাকিবকে। ভুগতে হয়েছে তামিমকেও। ১১৬ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। একই দিনে এ জুটি নিজেদের দুই হাজার রানও পূরণ করে। শুরুতে ধুঁকলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেছিলেন তামিম। জেসন মোহাম্মদের বলে দারুণ একটি ছক্কা মেরে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই জোসেফের বলে পুল করতে গিয়ে আকিলের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন এ ওপেনার। ৮০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। এদিন জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রান পূরণ করেন অধিনায়ক।

অধিনায়কের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন মুশফিক। ৩৮ রানের জুটিও গড়েছিলেন। তবে ফিফটি করার পরেই বোল্ড হয়ে যান সাকিব। রেমন রেফারের স্স্নোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে লাইন মিস করেন তিনি। নিজের স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং করে ৮১ বলের ইনিংসে চার মারেন মাত্র ৩টি। পরে রানের গতি বাড়াতে আগ্রাসী ব্যাট চালাতে থাকেন মুশফিক। মূলত তার ব্যাটেই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যায়। ৫৫ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ রানে বিদায় নেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

পরে মুশফিকের দেখানো পথে বাকি কাজটি সারেন মাহমুদউলস্নাহ। শেষ দিকে ঝড় তুলে দলের ইনিংস তিনশ ছুঁইছুঁই করার কৃতিত্বও তারও কম নয়। শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ৪২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন হার না মানা ৬৪ রান। ফলে ক্যারিবিয়ানদের বড় লক্ষ্যই ছুঁড়ে দেয় স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৬৪, লিটন ০ শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউলস্নাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফ ৫*; জোসেফ ২/৪৮, হার্ডিং ০/৮৮, মেয়ার্স ১/৩৪, রিফার ২/৬১, আকিল ০/৪৬, জেসন ০/১৬)।

ওয়েস্ট উইন্ডিজ: ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ (ওটলি ১, আমব্রিস ১৩, বনার ৩১, মেয়ার্স ১১, জেসন ১৭, পাওয়েল ৪৭, হ্যামিল্টন ৫, রিফার ২৭, জোসেফ ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১*; সাইফ ৩/৫১, মুস্তাফিজ ২/২৪, তাসকিন ১/৩২, মিরাজ ২/১৮, সাকিব ০/১২, মাহমুদউলস্নাহ ০/১১, সৌম্য ১/২২, শান্ত ০/৪)।

ফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম

সিরিজসেরা : সাকিব আল হাসান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে