শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ রায় আমার বা তার পরিবারকে সন্তুষ্ট করবে না :বন্যা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার সঙ্গে অভিজিৎ রায়

বস্নগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদ। মঙ্গলবার রায় প্রকাশের পর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

বন্যা আহমেদ তার পোস্টে বলেন, 'ছয় বছরের দ্বিধা এবং বিলম্বের পর আমরা

আজকে একটি রায় পেলাম। ২০১৫ সালে আমি এবং অভিজিৎ বাংলাদেশে গিয়েছিলাম বইমেলায় অংশ নিতে। সেখানে তার দুটি বই প্রকাশের কথা ছিল। আমরা জঙ্গি হামলার শিকার হলাম এবং অভিজিৎ মারা গেলো, আমি কোনোমতে বেঁচে গেলাম। এই মৃতু্যর মিছিল আরও এক বছর অনবরত চলমান ছিল।'

বন্যা আহমেদ বলেন, '২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি আমি এবং অভিজিৎ একদল বিজ্ঞান লেখকের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। যারা আয়োজক ছিল, তারা আমাদের কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখেছিল। অবশেষে সন্ধ্যায় আমরা তাদের দেখা পেলাম। ওই অনুষ্ঠানের পর আমাদের ওপর হামলা হয় এবং অভিজিৎকে হত্যা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল? হলেও তার ফল কী?'

তিনি আরও বলেন, 'কতিপয় কয়েকজনকে সাজা দিয়ে উগ্রবাদীদের উত্থানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া অভিজিৎ হত্যা কিংবা বস্নগার, প্রকাশক, সমকামীদের হত্যার ন্যায়বিচার হতে পারে না। তাই এই রায় আমার পরিবার কিংবা তার পরিবারকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না।'

তিনি বলেন, 'আজকে আদালত রায় দিয়েছেন। হামলাকারীরা বিজ্ঞান, দর্শন এবং ধর্ম সম্পর্কিত বই ও বস্নগ লেখার জন্য অভিজিৎকে হত্যা করেছে কি না, আদালত তার বিচার করছিল। এই রায় আমার কিংবা আমার পরিবারের কাছে কোনো অবসান নয়। আমি এটা কখনো আশা করিনি। গত ছয় বছরে এই মামলার তদন্তকারী কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যদিও আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং হামলার একজন ভিকটিম। জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রকাশ্যে মিথ্যা বলেছেন যে, আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি নই। আসল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে সরকারের কেউ কিংবা প্রসিকিউশনের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।'

রায় প্রসঙ্গে বন্যা আহমেদ ফেসবুক পোস্টে উলেস্নখ করেন, 'জঙ্গি সংগঠন যারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের দুই হোতা সৈয়দ জিয়াউল হক (বরখাস্ত মেজর জিয়া) এবং আকরাম হোসেনকে কোনো সময় আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার রায়ের পর আমরা জানতে পারি, হক বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখক, প্রকাশকদের হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল আমাদের ওপর হামলার পর ৮ মাস ধরে। তবু বাংলাদেশ সরকার তাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।'

তিনি লিখেছেন, 'আজকের দিনে একটি সভ্য দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা চালিয়ে কেউ পার পেতে পারে না। কিন্তু ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পুলিশ ক্রসফায়ারের নামে জঙ্গি সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের সদস্য মুকুল রানা শরীফকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করে, যে কি না আমাদের ওপর হামলাকারী জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। শরীফ পুলিশের হেফাজতে ছিল মারা যাওয়ার আগে, তাকে কেন মারা হলো?'

'প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় একজন হত্যাকারী জবানবন্দিতে বলেছে, ২০১৫ সালে বস্নগার, প্রকাশক এবং সমকামীদের হত্যা করার জন্য প্রচুর টাকা সরবরাহ করা হয়েছিল। আমি জানতে চাই, এই টাকার তদন্ত কেউ করেছে কি না? এই রায়ে কী হবে যদি আমরা জানতেই না পারি, টাকা কোথা থেকে এসেছে? অথবা এই হত্যার মূলহোতা কে?'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে