শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
সতর্কবার্তা ডবিস্নউএইচওর

শিগগিরই করোনামুক্তির ভাবনা 'অবাস্তব'

বিশ্বজড়ে আক্রান্ত সাড়ে ১১ কোটি, মৃতু্য ২৫ লাখ ৫০ হাজার ছাড়াল
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

শিগগিরই, অর্থাৎ চলতি বছরের মধ্যেই বিশ্ব করোনার ধকল কাটিয়ে আবারও চিরচেনা রূপে ফিরবে বলে যে স্বপ্ন দেখছে মানুষ, তা অবাস্তব বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। সোমবার সংস্থাটির জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান এক বিবৃতির মাধ্যমে এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি

বিশ্বজুড়ে টানা ছয় সপ্তাহ করোনা সংক্রমণ কম থাকার পর গত সপ্তাহ থেকে আবারও তা বৃদ্ধি পেয়েছে। রায়ান বলেন, 'চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আমরা এ ভাইরাস শেষ করে দিতে যাচ্ছি, আমি মনে করি, এমন ভাবনা খুবই আগাম এবং অবাস্তব হবে।' তবে তিনি এটাও বলেছেন, 'হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃতু্য কমানোর মাধ্যমে বিশ্বকে এই সংকট থেকে বের করে আনা সম্ভব হতে পারে।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, 'সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং করোনাভাইরাসের তীব্র ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা ভীতি দূর করে মহামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি। তবে সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে উপেক্ষা করা যাবে না এবং এই মুহূর্তে ভাইরাসটি অনেক নিয়ন্ত্রণে আছে।'

এদিকে, সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেছেন, 'গত সপ্তাহে ইউরোপ, দুই আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে করোনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।' করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির এই চিত্র হতাশাজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৈথিল্য,

করোনার নতুন ধরনের অব্যাহত বিস্তার এবং সুরক্ষা ব্যবস্থায় জনসাধারণের ঢিলেমি দেওয়ার কারণে এটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। টেড্রোস বলেন, 'টিকা মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। কিন্তু দেশগুলো যদি শুধুমাত্র টিকার ওপর নির্ভর করে, তাহলে তারা ভুল করবে। এই মহামারি মোকাবিলার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো মূল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলো মেনে চলা।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, 'আমরা যদি শৈথিল্য দেখাই, তাহলে এই ভাইরাস আবারও জেগে উঠবে। আমরা এটি হতে দিতে পারি না।' চলতি বছরের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু করতে চান টেড্রোস। যদিও তার এই লক্ষ্যমাত্রার বাকি আছে মাত্র ৪০ দিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকাদান প্রকল্প 'কোভ্যাক্সের' প্রথম ধাপের টিকার ডোজ গত সোমবার আফ্রিকার দেশ ঘানা এবং আইভরিকোস্টে পৌঁছেছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে আরও বেশ কিছু দেশে এক কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক। আগামী মে মাস শেষ হওয়ার আগে বিশ্বের ১৪২টি দেশে আরও ২৩৭ মিলিয়ন ডোজ করোনা টিকা পৌঁছাবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।

আক্রান্ত সাড়ে ১১ কোটি, মৃতু্য ২৫

লাখ ৫২ হাজার ছাড়াল

এদিকে, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে মৃতু্য ও শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৈশ্বিক এ মহামারিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ। পাশাপাশি মারা গেছে ২৫ লাখ ৫২ হাজারের বেশি। এছাড়া এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৯ কোটি আট লাখ।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত এক কোটি ১১ লাখ ২৩ হাজার ৬১৯ জন। মারা গেছে এক লাখ ৫৭ হাজার ২৭৫ জন। মৃতু্য বিবেচনায় দেশটি বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া ভারতে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে এক কোটি সাত লাখ ৯৬ হাজারের বেশি।

করোনা শনাক্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় এক কোটি পাঁচ লাখ ৯০ হাজার। তাদের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৬ জনের। আর সুস্থ হয়েছে ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ১০০ জন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫০ জন। মারা গেছে ৮৬ হাজার ৪৫৫ জন। আর সুস্থ হয়েছে ৩৮ লাখ ২৩ হাজারের বেশি।

আক্রান্ত বিবেচনায় পঞ্চম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ৪১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। মারা গেছে এক লাখ ২২ হাজার ৯৫৩ জন। আর ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৪ জন সুস্থ হয়েছে। তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, স্পেন সপ্তম, ইতালি অষ্টম, তুরস্ক নবম ও জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।

উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে করোনায় প্রথম রোগীর মৃতু্য হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। গত ২ ফেব্রম্নয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃতু্যর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে