শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
কাল থেকে লকডাউন

শিল্পকারখানা চালু রেখে কঠোর বিধিনিষেধ !

চলবে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ষ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান-পরিবহণ বন্ধ ষ খোলা থাকবে শিল্পকারখানাসহ জরুরি সেবা ষ ধান কাটা ও কৃষিশ্রমিক পরিবহণ করা যাবে ষ টিকা দিতে বের হওয়া যাবে ষ জেলা প্রশাসন-পুলিশকে নির্দেশনা দেবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে আবারও এক সপ্তাহের জন্য কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এসময় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ও পরিবহণ সেবা বন্ধ থাকলেও শিল্পকারখানাসহ জরুরি সেবা চালু থাকবে। এবারের বিধিনিষেধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের করণীয় নির্ধারণ করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

সোমবার কাজ ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি অবনতির কারণে আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩টি বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তবে সরকারের মন্ত্রীরা গণমাধ্যমে কথা বলার সময় 'লকডাউন' শব্দটি ব্যবহার করছেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পকারখানা চালু থাকলেও বন্ধ থাকবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

প্রজ্ঞাপণে বিপণিবিতান ও দোকানগুলো বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। তবে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা চলবে কিনা, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। ৫ এপ্রিল থেকে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাতে অনলাইনে কেনাবেচার বিষয়টি রাখা হয়েছিল। তবে এবারের বিধিনিষেধে অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

প্রজ্ঞাপণে আরও বলা হয়েছে, কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এর আগে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলাচলে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা এখনো চলমান।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে বুধবার থেকে এক সপ্তাহ

সব ধরনের অফিস ও পরিবহণ চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

প্রজ্ঞাপনে উলিস্নখিত ১৩ দফা বিধিনিষেধ হলো- ১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৩. সব ধরনের পরিবহণ (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদু্যৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। ৬. অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। ৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোরর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (সরাসরি/অনলাইন) করা যাবে। শপিংমলসহ অন্য দোকান বন্ধ থাকবে। ৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। ১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উলিস্নখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। ১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন। ১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির জমায়েত বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে। এবং ১৩. এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারে।

এর আগে সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'দেশে করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতু্যর হার। কিন্তু এতেও জনগণের উদাসীনতা কমেনি। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য 'সর্বাত্মক লকডাউনের' বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে সরকার।'

লকডাউন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সেদিন বলেন, 'জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কথা চিন্তা-ভাবনা করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেছেন, আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী ১৪ তারিখ থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন দিতে যাচ্ছি আমরা। এ সময় জরুরিসেবা ছাড়া সব ধরনের অফিস-আদালত, গণপরিবহণ, দোকানপাট, মার্কেট সবকিছুই বন্ধ থাকবে। সবকিছু কঠোর লকডাউনের আওতাধীন থাকবে। শিল্প-কারখানাগুলোও বন্ধ থাকবে। মানুষ যে যেখানে আছেন, সেখনেই থাকবেন। এটা কঠোর লকডাউন হবে।'

এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সাত দিনের লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হয় রোববার (১১ এপ্রিল)। বিধিনিষেধের সময় পালনের জন্য ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৪ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনে।

বিধিনিষেধ শুরু হলে গণপরিবহণ না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন থোলা থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মীরা। গণপরিবহণ না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে দোকান ও মার্কেট খুলে দিতেও আন্দোলনে নামেন মালিক-শ্রমিকরা। এরই মধ্যে গত ৭ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহণ খুলে দেওয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলাচল করছে বাস। তবে শপিংমল ও দোকান মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে আগামী ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে ৮ এপ্রিল নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে