শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বাড়বে কর রাজস্ব ষ বাড়বে হয়রানি

সেবা পেতে বাধ্যতামূলক হচ্ছে রিটার্ন জমা স্স্নিপ

হাসান আরিফ
  ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) থাকলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৫১ লাখ টিআইএনধারীদের অর্ধেকও রিটার্ন জমা দেয় না। তাই এখন থেকে টিআইএন সনদ থাকলেই গাড়ি রেজিস্ট্রেশন-নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ-নবায়ন করা যাবে না। এমনকি ঠিকাদারি কাজে অংশ নেওয়া যাবে না। এজন্য লাগবে রিটার্ন জমার সিস্নপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র)। এই স্স্নিপ দিয়েই সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। সরকার রাজস্ব বাড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে এনবিআর সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ব্যবস্থায় রিটার্ন জমা বাড়লেও মানুষের হয়রানি বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টিআইএনধারীর সংখ্যা ৫০ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৭ জন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন। এ হিসাবে জমা দেননি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২১০ জন। তাদের মধ্যে কর অঞ্চলগুলোয় প্রায় ২০ হাজার করদাতা সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা কর জমা পড়েছে।

দীর্ঘদিন সরকার আয়কর বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এজন্য সময় বাড়িয়ে হলেও করদাতাদের রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করা হয়। তবে ২০১৬ সালে আয়কর অধ্যাদেশে পরিবর্তন এনে ৩০ নভেম্বর জাতীয় কর দিবসের পর রিটার্ন জমা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সময় বাড়ানোর পথটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও করোনার কারণে এবার বিশেষ বিবেচনায় রিটার্ন জমার সময় একমাস বাড়ানো হয়। এতেও জমার পরিমাণ বিশেষ বাড়েনি।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, টিআইএন থাকলেও রিটার্ন জমা না দেওয়া নতুন নয়। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় না যেতে পারলে এ সমস্যা থাকবে। এজন্য সরকার কর ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক উদ্যোগের পরও আশানুরূপ রিটার্ন জমা না হওয়ায় তারা হতাশ। এজন্য এখন শুধু ইটিআইএন দিয়ে সেবা নেওয়া বন্ধ করে বিকল্প উপায় চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে

ট্যাক্স সার্টিফিকেট (রিটার্ন দাখিলের পর কর কর্তৃপক্ষের দেওয়া সনদ বা রিটার্নের অংশবিশেষ) বাধ্যতামূলক করা। কারণ অনেক সেবা এবং কর ছাড় নিতে টিআইএন বা ই-টিআইএন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এটা বন্ধ করে করদাতার কর সনদ দিয়ে সেবা সরবরাহ বা কর ছাড় দেওয়ার বিধান করা হবে।

বর্তমানে কোনো পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা দেওয়ার জন্য দরপত্র জমার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। একইভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন-নবায়ন, নৌযান রেজিস্ট্রেশন-নবায়ন, আমদানি-রপ্তানি সনদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি ও নবায়নে ই-টিআইএন সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু টিআইএনধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনলাইন থেকে এই সনদ নিয়ে সব সুবিধা ভোগ করলেও আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। ফলে রিটার্ন জমার হার বাড়ছে না। বড় একটি অংশ করের আওতার বাইরেই থাকছে।

বর্তমানে একজন সেবাগ্রহীতা রিটার্ন জমা না দিয়ে শুধু ই-টিআইএনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। আয়কর আইনে রিটার্ন জমা না দেওয়ার কারণে টিআইএন প্রত্যাহার বা বাতিলের সুযোগ নেই। তাই টিআইএনধারীদের রিটার্ন জমা না দিয়ে আয় গোপন ও কর ফাঁকির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া দরপত্রে অংশগ্রহণ, ঠিকাদারি তালিকাভুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে রিটার্নের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র জমার বাধ্যবাধকতা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করলে কর জাল ও কর কমপস্নায়েন্স বৃদ্ধি পাবে বলে এনবিআর মনে করছে।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ডক্টর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করজাল বাড়াতে এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ আইনে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেওয়ার কথা বলা থাকলেও অনেকে রিটার্ন জমা দেন না। এটি চালু করা গেলে রিটার্ন জমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থায় রিটার্ন জমা বাড়লেও মানুষের হয়রানিও বেড়ে যেতে পারে। এখন প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পেতে যে ধরনের কষ্ট ও পয়সা খরচ করতে হয়, সেটি আরও বাড়বে। কারণ তখন সেবা পেতে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র লাগবেই। বাধ্য হয়েই মানুষ কষ্টও করবে, বেশি পয়সাও খরচ করতে হবে। তাই এ উদ্যোগের সুফল পাওয়ার  একমাত্র মাধ্যমে অটোমেশন। অনলাইনে করদাতা রিটার্ন জমা দেবে, অনলাইনেই তাকে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে