শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইমানদার মুসলমানের কোনো পরাজয় নেই

সাখাওয়াত হোসেন
  ২১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

আলস্নাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনকারী ইমানদার মুসলমানের কোনো পরাজয় নেই। স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাদের পূর্ণ জয়ের সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, 'তোমরা হতাশ হইও না, দুঃখ পেয়ো না, বিজয় তোমাদেরই যদি তোমরা সত্যিকার মুমিন হয়ে থাকো।' (সুরা আলে ইমরান : ১৩৯)

পরবর্তী আয়াতেই আলস্নাহ বলেছেন, 'আজ যে দুঃখ কষ্ট তোমাদের পেয়ে বসেছে এর আগে এই ধরনের দুঃখ কষ্ট তোমাদের বিরোধীরাও পেয়েছে। তো কালের উত্থান-পতন মাত্র, মানুষের মাঝে আএির আবর্তন করে থাকি। সময় অবস্থাটি তোমাদের ওপর এজন্য আনা হয়েছে যে, আলস্নাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে। আর তিনি সময়ে তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে কবুল করতে চান। আর আলস্নাহ জালেমদের পছন্দ করেন না।' (সুরা আলে ইমরান : ১৪০)

পবিত্র কোরআনে ব্যাপারে আরও এরশাদ হয়েছে, 'মানুষ কি মনে করেছে ইমান এনেছি কথা বলার কারণেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তাদের পরীক্ষা করা হবে না। পূর্বেকার লোকদেরও আপিরীক্ষা করেছি,

অতঃপর নিশ্চয়ই আলস্নাহ জেনে নেবেন ইমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী, কারা মিথ্যাবাদী।' (সুরা আনকাবুত : ২-৩)

অপর একটি আয়াতে আলস্নাহ আরও বলেন, 'তোমরা কি মনে করেছো এমনিতেই বেহেশতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ (পরীক্ষার মাধ্যমে) আলস্নাহ জেনে নেবেন না, কে জিহাদ করতে প্রস্তুত আর কে ধৈর্য ধারণ করতে পেরেছে?' (সুরা আলে ইমরান : ১৪২)

মুমিনরা কথাও বিশ্বাস করে যে, ইমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ধৈর্যের মূর্তপ্রতীক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সাময়িক কোনো বিজয়ে মুমিনরা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হয় না, ব্যাপক উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়েও দেয় না। তেমনি সাময়িক কোনো পরাজয়েও হতাশ হয়ে পড়ে না। ভেঙে পড়ে না। মুমিনরা সাময়িক ক্ষতির বিষয়টিকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমনে করে।

ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাসুল (সা.)-এর সাহাবারা জুলুম-নির্যাতনকে হাসিমুখে বরণ করেছেন। নির্যাতনের মুখে হতাশ হননি কিংবা ভেঙে পড়েননি। বরং নির্যাতনে তারা আরও দৃঢ় হয়েছেন। হজরত বেলাল (রা.)-কে মক্কার তপ্ত বালুতে উটের পেছনে রশি লাগিয়ে টেনেহিঁচড়ে নির্যাতন করা হলেও তিনি দ্বীনের পথ থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরে দাঁড়াননি। হজরত খাব্বাব (রা.)-কে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে জ্বলন্ত কয়লার ওপর শুইয়ে বালু চাপা দেওয়া হয়েছিল। আর তার শরীরের চর্বি গলে গলে সেই আগুন নিভে গিয়েছিল। তবুও খাব্বাব (রা.) দ্বীনের পথ থেকে সরে যাননি।

তেমনিভাবে প্রকৃত মুমিনরা কোনো বিপদে পরাজয়ের মানসিকতা লালন করেন না। বরং সর্বক্ষেত্রে তারা একমাত্র আলস্নাহর ওপরই ভরসা করেন। তারা দুনিয়ার কোনো শক্তির কাছে আশ্রয় গ্রহণ কিংবা সাহায্যও চান না। বরং মুমিনরা বিশ্বাস করেন যে, সাহায্য চাইতে হলে একমাত্র আলস্নাহর কাছেই চাইতে হবে। ভয় এবং হুঙ্কার মুমিনদের যেমন টলাতে পারে না, তেমনি কোনো ধরনের প্রলোভনও মুমিনদের দুর্বল করতে পারে না। যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, বালা-মুসিবতে মুমিনরা একমাত্র আলস্নাহর ওপরই ভরসা করেন। কেননা ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 'যে ব্যক্তি আলস্নাহর ওপর নির্ভর করে আলস্নাহ তার জন্য যথেষ্ট।' (সুরা তালাক : ৩)

সুরা তাওবার ২০নং আয়াতে আলস্নাহ বলেছেন, 'আলস্নাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী যারা ইমান এনেছে এবং তার পথে ঘরবাড়ি ছেড়েছে এবং জানমাল সমর্পণ করে আলস্নাহর পথে লড়েছে, তারাই সফলকাম।'

তবে যুদ্ধ অর্থাৎ 'জিহাদ ফি সাবিলিলস্নাহ' সম্পর্কে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। লেবাসধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরাও অনেক সময় ব্যাপারে অপব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমানকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। মূলত ইসলািিজহাদ নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, নয় ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভের নাম। মূলত এটা হলো আলস্নাহ, রাসুল ও আখিরাতের প্রতি ইমানের অনিবার্য দাবি। আলস্নাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আখিরাতের শেষ বিচারে আজাবে আলিবা দোজখের বেদনাদায়ক শাস্তি থেকে নাজাতের জন্যই এই জিহাদে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র আল কোরআনের সুরায়ে সফের দ্বিতীয় রুকুর মাধ্যআেলস্নাহ যে ভাষায় ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। আলস্নাহর ঘোষণা বা নির্দেশনাটি নিম্নরূপ- 'হে ইমানদারগণ! তোমাদের কি এমন একটা ব্যবস্থার কথা বলব যা তোমাদের আজাবে আলিবা বেদনাদায়ক শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি দেবে? (আর তা হলো) ঈমান আনো আলস্নাহ ও রাসুলের প্রতি (আর এর অনিবার্য দাবি অনুযায়ী) জিহাদ করো আলস্নাহর পথে মাল দিয়ে এবং জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা প্রকৃত জ্ঞান লাভ করে থাকো।'

এই নির্দেশনার পূর্বেই এর প্রতিদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'তোমাদের গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। তোমাদের প্রবেশ করানো হবে এমন জান্নাতে যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনা প্রবাহিত হবে। আর সেই সুরম্য জান্নাতে বসবাসের জন্য থাকবে পূত-পবিত্র বাসস্থানসমূহ, এটাই সর্বোত্তপুরস্কার। তবে এছাড়া আরও একটি পুরস্কার আছে যা তোমরা পছন্দ করো, আর তা হলো নিকটতবিজয়, (এই বিজয় সম্পর্কে) মুমিনদের শুভ সংবাদ দাও।' এই পুরস্কারটি পাওয়ার জন্য করণীয় নির্দেশ করে আলস্নাহ পরবর্তীতে বলেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহর সাহায্যকারী হও, যেমন ঈসা (আ.) হাওয়ারিদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আলস্নাহর পথে কারা হবে আমার সাহায্যকারী? উত্তরে হাওয়ারিগণ বলেছিল, আলস্নাহর সাহায্যকারী আমরাই। অতঃপর বনি ইসরাইলের একটি অংশ ইমান আনল আর একটি অংশ ইমান আনতে অস্বীকার করল। অতঃপর আমরা ইমানদারদের সাহায্য করলাতাদের শত্রম্নপক্ষের উপর, ফলে চূড়ান্তভাবে তারাই হলো বিজয়ী।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে