শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৃতু্যভয়ে মুমিনরা কখনো ভীত নন

সাখাওয়াত হোসেন
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মৃতু্য যেমন অপরিহার্য, তেমন এর সময়কাল অনিশ্চিত। কেউই জানে না কখন তার মৃতু্য হবে। তাই প্রকৃত মুমিন মৃতু্যভয়ে ভীত না হয়ে মহান আলস্নাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। তবে মৃতু্য পরবর্তী জীবনের পরিণতি কী হবে তা ভেবে সন্ত্রস্ত থাকেন। মৃতু্যকে আলিঙ্গন করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মের মাধ্যমে পারলৌকিক জীবনের জন্য নেক আমল সংগ্রহে সচেষ্ট থাকার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সফলতা অর্জনের জন্য দিন-রাত কায়মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন।

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতদের মৃতু্যভয়ে ভীত না হয়ে বরং মৃতু্যকে স্মরণ ও পরবর্তী জীবনের পরিণতি চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এছাড়াও যারা মনে করে মৃতু্যর পর আর কোনো জীবন নেই তাদেরকে সতর্ক করার তাগিদ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) হাদিসে বলেন, 'তোমরা জীবনের স্বাদ ধ্বংসকারীকে (মৃতু্য) বেশি বেশি স্মরণ করো।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

এ প্রসঙ্গে মহান আলস্নাহ বলেন, 'আমি তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে দান করবে তোমাদের কারও

হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

মৃতু্য আসার আগে। অন্যথায় মৃতু্য এলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরও কিছুকালের জন্য অবকাশ দিলে দান করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।' (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ১০)

আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন তার পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বিপুলসংখ্যক আয়াতে প্রতিটি জীবের অবধারিত মৃতু্য, পারলৌকিক জীবন এবং সেখানে ইহলোকের আমলের প্রতিদান দেওয়ার বিষয় উলেস্নখ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'কেউ জানে না সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃতু্য কোথায় ঘটবে।' (সুরা লোকমান, আয়াত :৩৪) সুরা হজের ৬৬ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'আলস্নাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃতু্য ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদের পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি অকৃতজ্ঞ!'

'নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে তা শুধু আলস্নাহই জানেন। তিনি মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন। তিনি জানেন জরায়ুতে কী আছে। অথচ কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্য কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃতু্য হবে। শুধু আলস্নাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।' (সুরা লোকমান, আয়াত : ৩৪)

'দূরাচারীরা কি মনে করে যে, তাদের জীবন-মৃতু্য এবং বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জীবন-মৃতু্য একইরকম হবে? কত ভ্রান্ত ধারণা ওদের!' (সুরা জাসিয়া, আয়াত : ২১)

নেক আমল ও সৎকর্মের প্রতিদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে মহাপরাক্রমশালী আলস্নাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১৪৫ নম্বর আয়াতে বলেন, 'নিশ্চয়ই মৃতু্যর সময় নির্ধারিত। আলস্নাহর অনুমতি ছাড়া কারও মৃতু্য হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্য কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করব। আর যদি কেউ পরকালের জন্য কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেব।'

'প্রতিটি প্রাণকেই মৃতু্যর স্বাদ নিতে হবে। মহাবিচার দিবসে তোমাদের সবাইকে কর্মফল পুরোপুরিই দেওয়া হবে। সফল মানুষ হবে সে-ই, যাকে লেলিহান আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করানো হবে। আর শুধু পার্থিব জীবন তো এক মরীচিকাপূর্ণ ভোগ-বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

'হে নবী! আপনার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। আপনার মৃতু্য হলে ওরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?' (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৪)

সুরা জুমারের ৪২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, 'আলস্নাহ মৃতু্য এলে বা ঘুমের সময় আত্মাকে তুলে নেন। তারপর যার মৃতু্য অবধারিত তার আত্মা রেখে দেন। আর অন্যদের আত্মা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগকারীদের জন্য এর মধ্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে!'

'হে নবী ওদের বলুন, যে মৃতু্য থেকে তোমরা পালাতে চাচ্ছো, তোমাদের সে মৃতু্যর মুখোমুখি হতেই হবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদের হাজির করা হবে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আলস্নাহর কাছে। জীবদ্দশায় যা করেছো, তা তোমরা তখন পুরোপুরি জানতে ও উপলব্ধি করতে পারবে।' (সুরা জুমআ, আয়াত : ৮)

মৃতু্য যেহেতু নিশ্চিত, তবে তার দিনক্ষণ কারও জানা নেই তাই মুমিন-মুসলমানরা পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নেক আমল ও সৎকর্মে অতিবাহিত করতে সচেষ্ট থাকেন। কৃত অসৎকর্ম ও পাপাচারের জন্য তওবা করেন। কেননা মৃতু্যশয্যায় কারও তওবা কবুল হয় না।

এ প্রসঙ্গে সুরা নিসার ১৮ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, 'সারাজীবন অন্যায় করে মৃতু্যশয্যায় এসে যারা বলে, আমি তওবা করলাম, তাদের তওবা কোনো কাজে আসবে না। আর সত্য অস্বীকারকারী হিসেবেই যারা মৃতু্যবরণ করে, তাদের জন্যও তওবা নয়। তাদের জন্য আমি নিদারুণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।'

পবিত্র কোরআনে মৃতু্যর আগে তওবা না করাকে 'জুলুম' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আলস্নাহ বলেন, 'যারা তওবা করে না, তারা অবিচারকারী।' (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে