শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
মহামারির প্রভাব

অ্যাকাউন্ট বাড়লেও কমেছে হতদরিদ্রের আমানত

হতদরিদ্র ছাড়াও আমানত কমেছে কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, গার্মেন্ট শ্রমিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের
রেজা মাহমুদ
  ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

চলমান মহামারিতে ক্রমেই কমছে হতদরিদ্রদের সঞ্চয়। জীবনযাপনের অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি ও করোনায় কর্মহীনতায় শেষ করে ফেলছে এসব মানুষের জমানো ক্ষুদ্র আমানতও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে হতদরিদ্রদের ১০ টাকায় খোলা বিনা মাশুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আমানত কমেছে ১০৪ কোটি টাকা। যদিও তাদের এ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৫ লাখ বেড়ে ৩২ লাখ ছাড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির বিরূপ প্রভাবের করুণ শিকার হচ্ছে এ স্তরের মানুষ। সংকুচিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও সরকার ঘোষিত বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনার সরাসরি প্রভাব এ শ্রেণির মানুষের ওপর না থাকায় ব্যাংকের সঞ্চয় তুলতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২১) দেখা যায়, চলতি মার্চে এসে হতদরিদ্রদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা গত বছরের মার্চের চেয়ে প্রায় ৫ লাখ বেড়েছে। এ নিয়ে বিনা মাশুলে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ নিয়েছে ৩২ লাখ মানুষ। তবে এসব অ্যাকাউন্টে একই সময়ে আমানত কমেছে ১০৪ কোটি টাকা, যা প্রায় ৩৪ শতাংশ হারে কমে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ২১৮ কোটি টাকা।

হতদরিদ্র ছাড়াও কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, গার্মেন্ট শ্রমিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা ১০/৫০/১০০ টাকার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন। এসব অ্যাকাউন্ট নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট নামেও পরিচিত। এসব অ্যাকাউন্টের এক-তৃতীয়াংশ এবং প্রায় অর্ধেক আমানত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের।

মার্চ শেষে নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, যা গত বছরের মার্চের তুলনায় ৪ কোটি টাকা কম। এসব অ্যাকাউন্টে কৃষকদের ৪২২ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের ৫৬০ কোটি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ৬৮৭ কোটি, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ১৭৫ কোটি টাকা ছাড়াও অন্যদের বাকি টাকা আমানত আছে।

এ বিষয়ে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ডক্টর নাজনীন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, পরিসংখ্যান দেখে এটা স্পষ্ট, করোনায় এসব মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে তাদের বড় একটি অংশ তাদের সঞ্চয় ভেঙেছে। এজন্য মহামারিকালে কর্মহীনতা ও অধিকাংশের আয় কমে যাওয়াকেও প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাকালে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা নেওয়ার জন্য অনেকে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে থাকতে পারেন। এছাড়া নামমাত্র মূল্যে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা থাকায় তা অনেকেই ব্যবহার করছে।

এদিকে গ্রামীণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে ২০০ কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিমের অর্থ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়। তাও একবছর ব্যবধানে ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, দরে মহামারিতে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জীবিকা নির্বাহে বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সরকারি ভর্তুকি/মাইনে বিতরণে নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে