শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়িং হাউসের আড়ালে আইস বেচাকেনা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

টেকনাফ থেকে মাদক 'আইস' সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত একটি চক্র। একই সঙ্গে বায়িং হাউসের নামে উত্তরায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে চলত মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম। সেখানে মাদক সেবনের পর উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করা হতো বস্ন্যাকমেইল, অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো অর্থ। ভয়ংকর এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব-৩। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।

র্

যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অভিযানে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। তারা হলেন- তৌফিক হোসাইন, জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন, আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র, রাকিব বাশার খান, খালেদ ইকবাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ।

তাদের কাছ থেকে মাদক আইস, ইয়াবা, বিদেশি মদ, গাঁজা ও ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, এয়ারগান, রেপিস্নকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ, রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপআউট, খালেদ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃত রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্য। ক্লোজ গ্রম্নপের মাধ্যমে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করতেন তারা। টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে সরবরাহ করা হতো উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর, গুলশান, উত্তরা থেকে আইস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন তারা। রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করের্ যাব আরও জানতে পারে, একটি বায়িং হাউসের আড়ালে চলছিল আইস কেনাবেচা এবং সেবন।

শুধু মাদক বিক্রি নয়, বিক্রির পর সেবনের স্থানের ব্যবস্থা করত চক্রটি। যেসব তরুণ-তরুণী তাদের ব্যবস্থাপনায় এসব জায়গায় মাদক সেবন করতে আসতেন, তাদের বিভিন্নভাবে বস্ন্যাকমেইল করা হতো বলেও জানতে পেরেছের্ যাব। তরুণ-তরুণীদের আইস এবং ইয়াবা সেবন করিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বস্ন্যাকমেইল করে টাকা আদায় করত এই চক্র। সিন্ডিকেটের বাইরে আইস সরবরাহ করা হতো না বলেই ক্লায়েন্টদের প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখতেন তারা।

কোমল পানীয়, আইস, ইয়াবা এগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের একটি মাদক 'ঝাক্কি'। এইচএসসি পাস আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র ছিলেন তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ম্যাথ ল্যাবের কেমিস্ট। তিনিই বানাতেন এসব সংমিশ্রণ। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরা প্রথমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সেই মাদকের সংমিশ্রণে তৈরি করে 'ঝাক্কি' নাম দিয়ে সেগুলোও সরবরাহ করতেন মাদকসেবীদের কাছে।

উদ্ধার হওয়া এয়ারগান প্রসঙ্গের্ যাব জানায়, মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বায়িং হাউসের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানে আইস সেবনের পর তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তারা এইমিং গেমস খেলতেন। আর এই এয়ারগান দিয়ে চলত গেমটি।

তবে উদ্ধার এয়ারগানগুলোর বৈধ কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি, যদিও এয়ারগান ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে