শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিচ্ছিন্ন ঢাকা

তবুও বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আন্তঃজেলা পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও আটকানো যাচ্ছে না ঢাকায় প্রবেশকারীদের। এতে ঢাকায় ভারতীয় ডেল্টা ধরন সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে
হাসান আরিফ
  ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

রাজধানী ঢাকা নিরাপদ রাখতে সাত জেলায় বিধিনিষেধ (লকডাউন) দিলেও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। বিধিনিষেধ সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় উদেশ্য সফল হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। আন্তঃজেলা পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও আটকানো যাচ্ছে না ঢাকায় প্রবেশকারীদের। এতে ঢাকায় ভারতীয় ডেল্টা ধরন সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বিধিনিষেধ বহাল থাকা সাত জেলার ভেতরে রিকশা-সিএনজিসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের পরিমাণ প্রথম দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নির্দেশনায় গণপরিবহণ ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলে সংক্রমণের ঝুঁকি কম ছিল। বর্তমানে আন্তঃজেলা পরিবহণ বন্ধ থাকায় যাত্রীদের একটি অংশ বিকল্প পন্থায় ঢাকা আসছেন। এজন্য তারা ট্রাক, ভ্যান বা হেঁটে ব্যারিকেডের প্রবেশমুখ অতিক্রম করছেন। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি কোনোটাই মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে এ প্রক্রিয়ার অল্পসংখ্যক মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করলেও সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃতু্য উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার চারপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলছে। এই সাত জেলায় বিধিনিষেধের ফলে ঢাকার ভিতর থেকে অন্য জেলায় আর অন্য জেলা থেকে ঢাকার ভিতরে কোনো ধরনের গণপরিবহণ যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী বলেন, সরকার যে প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করছে তা কোনো পদ্ধতিই না। এতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। ঢাকা নিরাপদ করতে অন্য জেলায় বিধিনিষেধ দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলেও তিনি মনে করেন না। তার মতে সংক্রমণ রোধে একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে টিকাদান। এই টিকাই মৃতু্য ও সংক্রমণ দুই কমাতে পারবে।

তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করায় লোকজন আরও গাদাগাদি করে ঢাকায় প্রবেশ করছেন। এতে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই টিকাদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্কুল-কলেজ খুলে দিয়ে, রোভারস্কাউট আর বিএনসিসির ছেলেমেয়েদের গণপরিবহণের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য কাজে লাগানো উচিত। তারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো কাজ করবে। তাহলে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য হবে। তাদের কথা পরিবহণ শ্রমিকরা শুনবে, কারণ তারা পুলিশের মতো চড়-থাপ্পড় দিয়ে কথা বলবে না। এতে সংক্রমণ হারও কমে যাবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চারপাশের সাত জেলার প্রবেশমুখে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব

\হপ্রবেশমুখ পর্যন্ত আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচল করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গণপরিবহণগুলো ঢাকা থেকে বহুদূরে যাত্রীদের নামিয়ে দিলেও ভাড়া কমানো হয়নি। ফলে যাত্রীদের পরিবহণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

২২ জুন থেকে সাত জেলায় শুরু হওয়া এই বিধিনিষেধ চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। ফলে আজ ৫ম দিনের মতো সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে রাজধানী ঢাকা। দ্বিতীয় দিন থেকে ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রথম দিন থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌচলাচল। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো ধরনের দূরপালস্নার বাস। ফলে কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল আগের মতোই পুরোপুরি যাত্রীশূন্য রয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকার মহাখালী, সায়াদাবাদ, গাবতলী বাস টার্মিনালে। এসব বাস টার্মিনালে স্থানীয় বাস চলাচল করায় যাত্রীদের আসা-যাওয়া রয়েছে।

এদিকে বিধিনিষেধ বহাল থাকা জেলা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানা গেছে, কঠোর লকডাউনকে কেন্দ্র করে প্রবেশপথগুলোয় কড়া পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। ঢাকায় ঢুকতে কিংবা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না দূরপালস্নার যানবাহন। প্রতিটি জেলায় অভ্যন্তরীণ যাতায়াত বেড়েছে। চলছে রিকশা/সিএনজিসহ ছোট ছোট যানবাহন। ঘর থেকে মানুষের বের হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও অলসতা লক্ষ করা গেছে। দিন যত যাচ্ছে ঢিলেঢালা ভাবও তত বেশি দেখা যাচ্ছে। বিধিনিষেধ জারি করা জেলাগুলোর পোশাক কারখানা চালু থাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তারা হেঁটে বা রিকশা-ভ্যানে কর্মস্থলে যাচ্ছে। এতে সড়কগুলোয় যাতায়াতের মাত্রা বেশি হওয়ায় বিধিনিষেধের কঠোরতা অনেকটা কম বলে মনে হচ্ছে।

বিধিনিষেধ চলাকালে সার্বিক কার্যাবলি চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময় শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদু্যৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে