শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সিডিসি'র তথ্য

ধারণার চেয়েও বিপজ্জনক ডেল্টা ছড়ায় জলবসন্তের মতো

যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর তুলনায় 'ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট' যে বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী, তা জানা গিয়েছিল আগেই। তবে করোনার নতুন এই ধরনটি আগের ধারণার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক বলেই মনে করছে মার্কিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থা 'সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (সিডিসি)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম। সংবাদসূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন

সিডিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার

অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরন আরেক তীব্র ছোঁয়াচে রোগ জলবসন্তের (চিকেন পক্স) জীবাণুর মতো খুব সহজে ও দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনার টিকা নেওয়ার ফলে মানবদেহে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম এই ডেল্টা ধরন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়া ও মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে মার্স, সার্স, ইবোলা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকেও পেছনে ফেলেছে ডেল্টা। এমনকি মূল করোনাভাইরাসের চেয়েও এর সংক্রমণ ক্ষমতা কয়েকগুণ বেশি।

এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মূল ধরনটি এতটা সংক্রামক ছিল না, সেটা ছিল অনেকটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের মতো, যেখানে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে আরও দুইজনকে আক্রান্ত করতে পারতেন।

কিন্তু ডেল্টায় আক্রান্ত একজন রোগীর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন গড়ে অন্তত আট থেকে নয়জন। এমনকি, করোনা টিকার ডোজ নেওয়ার পরও যদি কেউ ডেল্টায় আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে তিনি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মতো নিজের নাক ও গলায় বিপুল পরিমাণ ভাইরাস বহন করেন।

একটি ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'আর জিরো'। সিডিসির পরিচালকর্ যাচেল ওয়ালনস্কি বলেন, ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা বা 'আর জিরো' আটের কিছু বেশি। উলেস্নখ্য, আট বা নয় মাত্রার 'আর জিরো' আছে, এমন ভাইরাস পৃথিবীতে বিরল।

তবে টিকার প্রতিরোধী শক্তিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলেও ডেল্টার সংক্রমণ প্রতিরোধে করোনা টিকার বিকল্প আপাতত নেই বলে জানিয়েছেনর্ যাচেল ওয়ালনস্কি। তিনি বলেন, 'এরই মধ্যে একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত টিকাসমূহ করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে না পারলেও এ রোগে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃতু্য থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।'

এর আগে সিডিসি যদিও ঘোষণা করেছিল, টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিদের আর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই, তবে সিডিসির পরিচালক এখন বলছেন, খুব দ্রম্নতই সেই নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হবে। নতুন নির্দেশনায় সবাইকেই মাস্ক পরার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত কয়েক মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রে ফের বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব রাজ্যে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন, সেই রাজ্যসমূহে বাড়ছে সংক্রমণ।

সিডিসির পরিচালকর্ যাচেল ওয়ালনস্কি মনে করেন, টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে জনগণকে বার্তা পৌঁছানোর পদ্ধতি ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, কারণ অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনটি প্রায় নতুন একটি করোনাভাইরাসের মতো আচরণ করছে। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, মানুষের এখন বোঝা দরকার, আমরা এখানে মায়াকান্না করছি না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের জানা অন্যতম অতি সংক্রামক একটি ভাইরাস এই ডেল্টা।'

এদিকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় টিকা এখনো দারুণ কাজ করছে বলে সম্প্রতি ইসরাইলের এক গবেষণায় দেখা গেছে। বলা হয়েছে, টিকা নেওয়া ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা করোনার আলফা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৯৭ শতাংশ সুরক্ষিত দেখা গেছে, তবে ডেল্টার বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা ৮৫ শতাংশ।

'ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া'র সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চার্লস চিউ বলেন, 'এসব তথ্য পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমাদের কেন মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যনীতিতে ফিরে যাওয়া উচিত।'

ক্যালিফোর্নিয়ার 'স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রানজিশনাল ইনস্টিটিউট'র পরিচালক ডা. এরিক টপল বলেন, 'এই বছরের শুরুতে যদি আরও লোককে টিকা দেওয়া যেত, তাহলে রোগীর সংখ্যা হয়ত বাড়ত না, আর মাস্কে ফেরাও জরুরি হয়ে উঠত না।' তিনি আরও বলেন, 'যদি জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়া হতো, তাহলে আমরা এমন বিব্রতকর অবস্থায় থাকতাম না। যখন অর্ধেকের বেশি মানুষকে (পুরোপুরি) টিকা দেওয়া হয়নি, তখন আপনি অবশ্যই অরক্ষিত।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে