শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন 'টাস্কফোর্স' গঠন

করোনার উৎস জানতে এবার শেষ চেষ্টা ডবিস্নউএইচও'র

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাস কোথা থেকে এলো, তা জানতে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে 'নতুন টাস্কফোর্স' গঠন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। নতুন এই টাস্কফোর্সের কাছে এটি করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানের 'শেষ সুযোগ হতে পারে' বলে মন্তব্য করেছে ডবিস্নউএইচও। একইসঙ্গে চীনকে করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে সংস্থাটি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি, ডিডবিস্নউ নিউজ

করোনাভাইরাস কীভাবে এলো, তা নিয়ে এতদিন ধরে কম আলোচনা হয়নি। নানা ধরনের তত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে। কেউ বলেছেন, চীনের উহানের কাঁচা মাংসের বাজার, কেউ বলেছেন বাদুর থেকে, আবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকে অভিযোগ করেছেন, চীনের গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। চীন অবশ্য এই দাবি বারবার অস্বীকার করেছে। ফলে দেড় বছরের বেশি সময় আগে চীনের উহানে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এটির প্রথম আবির্ভাব নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে গেছে।

'সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রম্নপ অন দ্য অরিজিন অব নভেল প্যাথোজেনস্‌' (এসএজিও) টাস্কফোর্সের জন্য বিশ্বসংস্থাটি ২৬ জন বিশেষজ্ঞকে মনোনীত করেছে। ভাইরাসটি উহানের বাজারে প্রাণী থেকে মানুষে বাহিত হয়েছে, না শহরটির কোনো গবেষণার থেকে দুর্ঘটনাবশত

ছড়িয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখবে এসএজিও।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি টিম চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে চীনে গিয়েছিল। তদন্ত শেষে তারা জানিয়েছিল, ভাইরাসটি সম্ভবত বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে, কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও কাজ করা দরকার। কিন্তু পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস জানান, তথ্যের ও চীনের দিক থেকে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে তদন্তটি ব্যাহত হয়েছে।

প্রস্তাবিত এসএজিও টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে আগের টিমের হয়ে চীন পরিদর্শন করে আসা ছয় বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। করোনাভাইরাস ছাড়াও এসএজিও উচ্চ ঝুঁকির অন্য রোগ-জীবাণুর উৎপত্তি নিয়েও অনুসন্ধান চালাবে।

ডা. টেড্রোস বলেন, 'ভবিষ্যৎ প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের জন্য নতুন রোগ-জীবাণু কোথা থেকে আসছে, তা বোঝা দরকার।' 'সায়েন্স' সাময়িকীতে এক যৌথ সম্পাদকীয়তে টেড্রোস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্য কর্মকর্তারা বলেছেন, 'একটি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা বাতিল করে দেওয়া যায় না।' স্বাস্থ্য সংস্থাটির জরুরি অবস্থা বিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, 'এসএজিওর কাজ ভাইরাসটি উৎস বোঝার শেষ সুযোগ হতে পারে।'

ডবিস্নউএইচও'র টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মারিয়া কারখভ বলেন, আরও ডজন তিনেক সমীক্ষা চালাতে হতে পারে। উহানে যারা প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাও খুব জরুরি।

মারিয়া বলেছেন, 'সেই সময় রক্ত পরীক্ষার স্যাম্পল, প্রথম দিকের রোগীদের সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা জরুরি। তার মতে, এটিই আমাদের করোনার উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সুযোগ এবং সম্ভবত শেষ সুযোগ।'

মহামারির প্রথম মাসে সংগ্রহ করা লাখো বস্ন্যাড ব্যাংক নমুনা পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন, 'সিএনএন' এমন প্রতিবেদনে প্রকাশ করার পরপরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন টাস্কফোর্সের ঘোষণা এলো।

জাতিসংঘের জেনেভা দপ্তরে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন শু এসএজিওর কাজকে 'রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য জায়গায়ও টিম পাঠানোর সময় হয়েছে।

ডবিস্নউএইচও'র এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াও চীন দ্রম্নতই দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের দূত চেন শু বলেন, এর আগে দুইবার চীনে দল পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একটি যৌথ রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে।

তার ভাষায়, আর কোনো দলের চীনে যাওয়ার দরকার নেই। বরং অন্য দেশে দল পাঠাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তার মতে, কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যেন দল গঠন করা না হয়। বিজ্ঞানের স্বার্থে, বিজ্ঞানের জন্য যেন দল গঠন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে