শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনা-মোদির বৈঠকে যুক্ত হবে রোহিঙ্গা ইসু্য বার্তা সংস্থা এএনআই'র প্রতিবেদনের তথ্য

ম যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০২২, ০০:০০

আসন্ন ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইসু্যটি উত্থাপন করবেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এএনআই'র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি মিয়ানমার থেকে

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসনের ফলে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করবেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আমাদের কাছে একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হলো (রোহিঙ্গাদের) তাদের রাখাইন প্রদেশে (মিয়ানমার) প্রত্যাবাসন। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন তখন তিনি এ বিষয়টিও উত্থাপন করবেন, এই প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারত কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।'

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গা এই শরণার্থী সংকট সাম্প্রতিক ইতিহাসে সৃষ্ট সবচেয়ে বড়, দ্রম্নততম সংকটগুলোর একটি।

মোমেন আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি, এই বিশাল জনসংখ্যা অর্থাৎ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কেবল সহায়তা করাই নয়, একই সঙ্গে আমাদের এই সমস্যার কিছু টেকসই সমাধানের দিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের কাছে একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবাসন।'

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, 'মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়েরই অভিন্ন প্রতিবেশী ভারত। তাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অতীতেও আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি এবং ভবিষ্যতেও এ ক্ষেত্রে দেশটিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আমরা অনুরোধ অব্যাহত রাখব।'

মাসুদ বিন মোমেন বলছেন, 'উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবিকার পাশাপাশি আবাসনের মতো সুবিধার মাধ্যমে যদি তারা (রোহিঙ্গারা) সঠিক উপযোগী পরিবেশ খুঁজে পায়, তাহলে তারা ফিরে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে হয়তো কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হবে এবং মিয়ানমার সম্মত হলে ভারত সেই সহায়তা করতে পারে।'

বাংলাদেশের এই কূটনীতিক আরও বলেছেন, তিনি গত বছর সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান মোমেন। তিনি বলেন, 'আমি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন, তখন ভারত কিভাবে রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসনে আমাদের সাহায্য করতে পারে সেটি তুলে ধরবেন।'

গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নেমেছে। তারা মূলত সেখানে আগে থেকেই বসবাসরত আরও ২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ হয়েছেন। আগেই সেখানে বসবাসরত ওই দুই লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে সৃষ্ট সংকটের কয়েক বছর আগে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।

ধারণা করা হয়, বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কুতুপালংয়ে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে বাস করে। বিপুলসংখ্যক এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।

এদিকে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। বেশকিছু রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান ও শিশু পাচারের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এই অঞ্চলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই মাথাব্যথার কারণ নয়, বরং (পার্শ্ববর্তী) অঞ্চলের জন্যও। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে নারী ও শিশুসহ মাদক ও মানব পাচার এবং আন্দামান সাগরের (ভারত) কাছেও আমরা কিছু কার্যকলাপ খুঁজে পেয়েছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে