শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে ফুটবলে নিষিদ্ধ করল ফিফা

ম ক্রীড়া ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

খড়গ ঝুলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। নানা টানাপড়েনের পর অবশেষে তা নেমেই এলো। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ঠিক পরের দিনই ক্রীড়াক্ষেত্রে সব থেকে লজ্জাজনক শাস্তির মুখে পড়ল ভারত। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে (এআইএফএফ) অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বিবৃতিতে জানায়, ফেডারেশনে 'তৃতীয় পক্ষের অন্যায্য হস্তক্ষেপের' কারণে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার আইনে স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, ফিফা স্বীকৃত প্রতিটি দেশের ফুটবল সংস্থা হবে স্বশাসিত। ফিফা কখনো কোনো দেশের ফুটবল সংস্থার ওপর রাজনৈতিক বা সরকারি হস্তক্ষেপ

বরদাস্ত করে না এবং এই কারণে তারা নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তানকেও।

নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিফার কোনো ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা ও ফুটবল কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ভারত। আগামী ১১ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠেয় মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপও চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। এই আসর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ চিন্তা-ভাবনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফিফা।

প্রফুল প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এআইএফএফের সবশেষ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু গঠনতন্ত্র সংশোধন সংক্রান্ত একটি জটিলতায় অচলবস্থার তৈরি হয়। সেই সংশোধনী মূলত প্যাটেলেরই চাওয়া ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে নানা সময়ে। নির্বাচন না হওয়ায় প্যাটেলই দায়িত্বে রয়ে যান।

গত মে মাসে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এআইএফএফের সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেন। ফেডারেশন পরিচালনা, গঠনতন্ত্র সংশোধন ও দেড় বছর ধরে ঝুলে থাকা নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই কমিটিকে। এরপর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সাধারণ সম্পাদক উইন্ডসর জনের নেতৃত্বে একটি দলকে ভারতে পাঠায় ফিফা ও এএফসি। তারা ভারতের ফুটবল কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেয়, যে অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে বলা হয়।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী অনুমোদনের কথা এআইএফএফের। তবে এই মাসের শুরুতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেন দ্রম্নত নির্বাচন সেরে ফেলতে এবং নির্বাচিত কমিটি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেবে তিন মাসের জন্য। আদালতের এই আদেশে থমকে যায় ফিফা ও এএফসির করে দেওয়া রোডম্যাপ। ফিফা এরপরই চিঠি দিয়ে এআইএফএফকে সতর্ক করে দেয় এবং আদালতের রায়ের অনুলিপি ফিফাতে পাঠাতে নির্দেশ দেয়। গত মঙ্গলবার ছিল অনুলিপি পাঠানোর শেষ সময়। এরপর এলো নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত। ফিফা বিবৃতিতে জানায়, 'নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে তখনই, যখন এআইএফএফের নির্বাহী কমিটির ক্ষমতা নাকচ করে একটি প্রশাসক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে এবং এআইএফএফের প্রশাসকরা ফেডারেশনের দৈনন্দিন কাজে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন।'

ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হবে বলে বিবৃতিতে উলেস্নখ করে ফিফা এবং ইতিবাচক ফলাফলের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী বলে জানানো হয়। কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনে সরকারি বা বাইরের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ফিফা কখনোই মেনে না নেওয়া, আইনিভাবেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বলা হয়। বিভিন্ন দেশকেই এ কারণে নানা মেয়াদে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে ফুটবলে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে কুয়েত, ইন্দোনেশিয়াও নিষিদ্ধ হয়েছিল। একই কারণে ২০০২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশকেও।

এবার ভারতকেও নির্বাসনে পাঠিয়েছে ফিফা। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে এ নিষেধাজ্ঞার খবর জানায় ফিফা। বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বু্যরো অব ফিফা কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে এআইএফএফকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এ সংস্থায় তৃতীয় পক্ষের অনুচিত প্রভাবের ফলে ফিফা সনদের পরিষ্কার লঙ্ঘন হয়েছে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে