সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুনিদের আশ্রয়দাতা দেশ মানবাধিকারের কথা বলে

স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভার শুরুতে ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন -ফোকাস বাংলা

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে নিয়ে নানা খেলা চলছে। এই এলাকাটাকে নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত চলছে। যেহেতু আমি জানি, আমি বুঝি যে, কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে। তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে, তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে একদিকে ভারত মহাসাগর, অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। এই ভারত মহাসাগরে কিন্তু আমাদের বে অব বেঙ্গল। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এই জায়গা থেকে সব ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এই জায়গাটা ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে, তার কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে এখান থেকে পণ্য পরিবহণ হয়। আজকে আমাদের গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর এই জায়গাটাকে ব্যবহার করা। আর এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা এটাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি তাদের চোখের মণি। তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতেই হবে। যে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত,

যাদের হাতে আমার বাবা-মা, ভাইয়ের রক্তের দাগ। হাজার হাজার কর্মীর রক্তের দাগ। তাদের জন্য তারা উতলা হয়েছে। আজ তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতেই হবে। আসলে ক্ষমতায় বসানো নয়। আজকে সবার উদ্দেশে একটা কথা এখানে বলে রাখি এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন নয়, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়। এরা একটা জিনিসই করতে চায়, আজকে যে আমরা গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, মানুষ আজকে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার কমছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।'

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'সব থেকে অবাক লাগে, যেসব দেশে এই খুনিদের (বঙ্গবন্ধুর) আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যখন আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে। তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে। তারা যেন এখন খুবই... বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একেবারে উতলা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এদেশে নির্বিচারে অত্যাচার চলল। কত মানুষকে খুন করেছে। হাত কেটেছে। চোখ তুলে নিয়েছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। তখন নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি কেন? সেই নির্বাচনে তো আমাদের হারার কথা নয়। সে নির্বাচনে তো জোর করে আমাদের হারানো হয়েছে। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমান বা জেনারেল এরশাদের সময় ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল বন্ধ করে রেখে ফল ঘোষণা করে, সেটা নিয়ে তো এদের কোনো উদ্বেগ আমরা দেখিনি। আজকে তাদের কাছ থেকে নির্বাচনের কথা, মানবাধিকারের কথা আমাদের শুনতে হয়। তো আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল- যেখানে আমরা বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চাইতে পারতাম না। হত্যার বিচার চেয়ে একটা মামলা করার অধিকার আমাদের ছিল না।'

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, '১৯৮৮ সালে এরশাদের নির্বাচনের সময় তো তাদের উদ্বেগ দেখিনি। হঠাৎ এবারের ইলেকশনের সময় যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল। নির্বাচনের একেবারে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায় কী? কীভাবে হবে তাই নিয়ে সব থেকে বেশি এবং একের পর এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কী? আর বিএনপি এখন তাদের চোখেন মণি। যে বিএনপি এত মানুষ হত্যা করেছে। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। তারা কয়দিন আগেও আগুন দিয়েছে। ২০১৩, '১৪ ও '১৫তে অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করল। কিছুদিন আগেও তো পুলিশের গাড়িতে আগুন। পুলিশের ওপর আক্রমণ। তো পুলিশ কি বসে বসে মার খাবে? জাতীয় সম্পদকে নষ্ট করা, এদেশে একটার পর একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, আজকে তাদের নিয়ে মাতামাতি।'

বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে, এমন প্রস্তাবের ইঙ্গিত দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'তাদের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অনেক বলেছি। শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছি। দেশের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু আজকে দেখি, এত বেশি নির্বাচন নিয়ে কথা। যখন আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। খালেদা জিয়ার সেই আজিজ মার্কা বা সাঈদ মার্কা নির্বাচন কমিশন তো না। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ইলেকশন করার চেষ্টা করেছে, তখন এত চেতনা আমরা দেখিনি। এত কথাও শুনিনি। বাংলাদেশের এই উন্নয়নটা, এটা বোধহয় তাদের পছন্দ নয়। অগ্রযাত্রাটা তাদের পছন্দ নয়।'

অতীতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঘটনা বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্র কী? আমি আমেরিকায় যখন গিয়েছিলাম, স্টেট ডিপার্টমেন্টে তখন ওদের জিজ্ঞাস করেছিলাম যে, আমি এটা মনুমেন্ট দেখে এলাম যাতে লেখা ''গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল''। আর আমি একটা দেশ থেকে এদেশি যেখানে ''গভর্মেন্ট অব দ্য আর্মি, ফর দ্য আর্মি বাই দ্য আর্মি জেনারেল''। তো আপনারা তাদের সাপোর্ট দেন কীভাবে? আপনাদের গণতন্ত্র কি ওই আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত থাকে? আটলান্টিক পার হলেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বলতে যায়?'

এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের কিছু আঁতেল আছে। তারা জানি না এসব চিন্তা করে কিনা? তারা এগুলো কখনো উপলব্ধি করে কিনা? সেগুলো না করেই তারা ওই এদের সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়। এ বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য দেশ, আমি তো বলব ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি।'

তিনি বলেন, 'এই এলাকাটাকে নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে যেখানে সংঘাত ছিল। আমরা সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানে আবার নানারকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা। যেহেতু আমি জানি ও বুঝি, যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে এবং তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে, তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।'

দেশপ্রেমী নাগরিকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনোদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি করি না। তাহলে ২০০১ সালে যখন আমার কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব এসেছিল খালি মুখেই বলতাম আমি গ্যাস বিক্রি করব, তাহলে ক্ষমতায় আসার কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বার্থ বেচে, দেশের মানুষের সম্পদ অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে, এরকম ক্ষমতালোভী আমি না, আমার বাবাও ছিলেন না, আমিও না। দেশের সম্পদে মানুষের অধিকার। এই সম্পদ মানুষের অধিকার, সেটাই করে যাচ্ছি। আজকে যখন দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, তখনই সবার মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেল।'

তিনি বলেন, 'আসলে তাদের ক্ষমতায় বসানো না, এখানে একটা কথা আমি সবাইকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে রাখি- এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন না, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না, এরা একটা জিনিসই করতে চায়। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ৫ দশমিক ৭ এ নামিয়ে এনেছি। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।'

বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার প্রসঙ্গে টেনে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা আমাদের বাড়িতে ওঠাবসা করেছে। সব সময় খাওয়া-ধাওয়া করেছে, তারাই বেঈমানি করেছে। সংবিধান অনুসরণ না করে খুনি মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করল। জিয়াউর রহমানকে বানানো হলো সেনাপ্রধান। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তো জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা তো বাস্তবতা। তবে বেঈমানি করে মোশতাককে মীর জাফরের মতো বিদায় নিতে হয়েছে।'

জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'উর্দি বসে ক্ষমতায় উত্তরণ, এরপর নিজেকে রাজনীতিক বানানোর চেষ্টা। সেনাপ্রধান থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। নির্বাচন করেছে আর্মি রুল ভঙ্গ করে। প্রহসনের নির্বাচন করে। ভোট কারচুপি তো তখনই শুরু হয়। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে। সব বাংলাদেশ যেন কারাগারে পরিণত হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসি দিয়েছে। ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে একে একে হত্যা করেছে। মানুষের না ছিল ভোটের অধিকার, না ছিল কথা বলার অধিকার। না ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণ করার অধিকার। জিয়ার পথ অনুসরণ করে ক্ষমতায় আসল এরশাদ। এরপর জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় আসল খালেদা জিয়া।'

জামায়াতের উত্থান জিয়াউর রহমানের হাতে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কারণ এই জামায়াত, এরা ছিল যুদ্ধাপরাধী। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে গণহত্যা চালায়। মেয়েদের সেনাক্যাম্পে ধরে নিয়ে পাশবিক অত্যাহার করে। লুটপাট করে। গ্রাম পুড়িয়ে জ্বালিয়ে দেয়। জামায়াতে ইসলামী ছিল তখন তাদের দোসর। তাদের নিয়ে আল বদর, রাজাকার বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তোলে। এরা পাকিস্তানি বাহিনীকে গ্রামের পথ দেখিয়ে গ্রামে নিয়ে যায়। মা-বোনদের ধরে ধরে তাদের হাতে তুলে দেয়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করিয়েছেন। তাদের কোনো ভোটাধিকার ছিল না। তাদের দল করার অধিকারও ছিল না। তাদের অনেকে তো পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে যায়। কেউ কেউ বিদেশে চলে যায়। আর দেশে যারা ছিল তারা সবাই আন্ডার গ্রাউন্ডে যে সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন পার্টির সঙ্গে ভিড়ে যায়। সেই সময় ছাত্রলীগ ভেঙে যে জাসদের সৃষ্টি হয় এই জাসদের সঙ্গে এরা যুক্ত হয়ে যায়। যে কারণে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে জাসদ যে বড় বড় মিটিং করত, টাকা পয়সার অভাব হতো না। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো, এরপর তাদের (জাসদের) গুরুত্ব কমে গেল। তখন তাদের লোকও নেই। অর্থও নেই। কারণ রাজাকাররা সুযোগ পেয়ে গেল। জিয়াউর রহমান মার্শাল-ল' অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংবিধানের ১২ ধারা বিলুপ্ত করে এবং এদের ভোটের যে অধিকার ছিল না, সেই ৩৮ ধারা বাদ দিয়ে ভোট করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়। ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে যে সংসদ গঠন করে, সেই সংসদে এই আইন পাস করে। স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানায় জিয়াউর রহমান। দেড়শ' মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাকারী জয়পুরহাটের আব্দুল আলিমসহ আরও যারা রাজাকার ছিল, তাদেরকে মন্ত্রী উপদেষ্টা নানাভাবে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেয় যুদ্ধাপরাধীদের হাতে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'খুনিদের বিচার হবে না- খুনিদের মদদ দিয়েছে। পুরস্কৃত করেছে। ক্ষমতা দিয়েছে। এরশাদও তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন খুনিদের নিয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল গঠন করে। এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সুযোগ দেয়।'

তিনি বলেন, '১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার আসল রূপ বেরোলো। ১৫ আগস্ট যেদিন আমরা শোক পালন করি, সেই ১৫ আগস্ট হয়ে গেল তার জন্মদিন। একটা মিথ্যা জন্মদিন। সে তো কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবে না ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন। তার বাবা, মা, তার পাসপোর্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে- এসব ডকুমেন্টে তো ১৫ আগস্ট নেই। সে যে একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল সেখানেও ১৫ আগস্ট নয়। ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার পাসপোর্টেও ১৫ আগস্ট নয়। '৯১ সালে যখন ক্ষমতায় আসল ১৫ আগস্ট হয়ে গেল তার জন্ম তারিখ, যখন আমরা শোক করি। এতগুলো মানুষ যেখানে নির্মমভাবে খুন হয়েছে, সেটাকে সে উৎসব হিসেবে নিল। দুর্ভাগ্য তার অনেক পা-চাটা দল তার জন্য বড় বড় কেক বানিয়ে নিয়ে সেখানে যেত। তার যত বয়স তত বড় কেক উপহার দেওয়া হতো। এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনা আমরা দেখেছি। এই হত্যার দিনটাকে যে উৎসব হিসেবে পালন করত, কত বিকৃত মানসিকতা থাকলে এটা করতে পারে!'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মার্শাল-ল দিয়ে অবৈধভাবে যে ক্ষমতা দখল এবং পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ উচ্চ আদালত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অন্তত মুক্তি পেয়েছে এখান থেকে। মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই।'

বিএনপি আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারপরেও দেশের মানুষ বিএনপির পেছনে দাঁড়ায়। কীভাবে যায়, সেটা আমার প্রশ্ন? তারা এ পোড়া মানুষগুলোর চেহারা দেখে না? যারা জীবন্ত মানুষকে পেট্রোল দিয়ে পোড়াতে পারে তারা কি মানুষ? এদের মধ্যে কি মানুষ্যত্ব আছে? জনগণের অর্থ-সম্পদ দুই হাতে লুট করেছে।'

অর্থ পাচারে তারেক রহমানের সাজার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'তাদের দলে লোক যায় কীভাবে? তাদের সঙ্গে মানুষ থাকে কোন আশায়? সেটাই আমার প্রশ্ন।'

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদেরই এক কুলাঙ্গার, সুদখোর, যে শ্রমিকের অর্থ মেরে খায়, কোম্পানি আছে, লাভের ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দিতে হবে। সেই টাকাটা যে দেয়নি, তার ওপর ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, শ্রমিকের অর্থ চুরি করে খাওয়া, গরিব মানুষের এমডি পদের লোভ- এ পদে থেকে দরিদ্র মানুষগুলোকে উচ্চ সুদে ঋণ দিয়ে, তাদের রক্ত চুষে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে ফেলা। এটাই বাস্তবতা। এরা তাদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। এটা আমরা দেখি।'

দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, এটাই অনেকের অন্তর্জ্বালা। লুট করে খেতে পারছে না, ক্ষমতায় নাই। জনগণকে শোষণ করে খেতে পারছে না, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না। তাই ধোঁয়া তুলছে নির্বাচনের। বিএনপির মুখে নির্বাচনের কথা আসে কোথা থেকে।' তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল। এখন ওখানে বসে বড় বড় কথা বলে, টাকা কত লাগবে লোক নিয়ে আসেন। দেশের মানুষের কত টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে বিদেশে, একবার চিন্তা করে দেখেন। তারা এখন জনগণের ভাগ্যে নিয়ে খেলতে চায়।' নির্বাচন না করার চক্রান্তে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'কোনো খেলা খেলে বাংলাদেশের ভাগ্য কেউ নষ্ট করতে না পারে, এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।'

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে