১৬ বছর আগে পিলখানায় দু'দিন ধরে চলা হত্যাকান্ডের পেছনে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা 'না নেওয়াকে' দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যোগসাজশে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তারা এ ঘটনাগুলো করতে দেন। দু'দিন ধরে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলে।'
মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো পালিত 'জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে' বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশের শত্রম্নরা ও সেনাবাহিনীর শত্রম্নরা চক্রান্ত করে বিডিআরের অভু্যত্থানের নাম করে সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেওয়ার অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশের শত্রম্নদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আঘাত হানা এবং সেনাবাহিনীর মনোবল যাতে নষ্ট হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে যায়, সেজন্যই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ, অন্তত এটাকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা প্রত্যাশা করব এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ, সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি উদঘাটন করা এবং যারা দায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা।'
দিনটিকে জাতির জন্য 'কলঙ্কজনক' মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আজকে আমরা দীর্ঘ বছর পরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। দেশের রাজনৈতিক একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে উৎখাত করে আমাদেরকে একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে আজকে একটা নতুন বাংলাদেশ গঠন করার। শহীদ সেনা সদস্যদের এই আত্মত্যাগ যেন বিফলে না যায়। স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রশ্নে যেন আমরা আপস না করি। আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে করতে পারি- আজকে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।'
২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ড দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে। বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহ ও হত্যা মামলার বিচার হলেও ক্ষমতার পালাবদলের পর পুনরায় তদন্তের দাবি ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরের সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
একসঙ্গে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনাকে 'জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি' দিতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ২৫ ফেব্রম্নয়ারিকে 'জাতীয় শহীদ সেনা দিবস' ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রথমবারের মতো পালিত হওয়া এই দিবসের শুরুতে মঙ্গলবার ঢাকার বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।