শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা ও ধরলার তীব্র ভাঙনে দিশেহারা তীরবর্তী মানুষ

তৌহিদুল ইসলাম লিটন, লালমনিরহাট
  ১৪ জুন ২০২১, ০০:০০
লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বেড়ে ভাঙন হুমকিতে বাঁধসহ নানা স্থাপনা -যাযাদি

তিস্তা ও ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিনে প্রবল ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা এবং আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধসহ নানা স্থাপনা। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই তীব্র ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোগলহাটের ফলিমারী এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে গত তিন দিনে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা ও ভুট্টাসহ অর্ধশত বিঘা আবাদি জমি। গৃহ হারা হয়েছেন অনেক পরিবার। অসহায় পরিবারগুলো স্থানীয় বাঁধে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, বালাপাড়া, বাদিয়ারটারী ও চৌরাহা গ্রামে গত তিন দিনে তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে ২০টি পরিবারের বসতভিটা। এ ছাড়া অর্ধশত বসতভিটা ও শতাধিক একর আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কুটিরপাড় এলাকার এক কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি বালুর বাঁধ হুমকি মুখে পড়েছে। এই বাঁধটি স্থানীয়রা নিজ অর্থ প্রায় ১৫ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন। এলাকাবাসীর দাবি, তারা চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা চান না, তারা তিস্তার বাঁধ চান।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত দুই দিনে ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক (৫০) মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিন আগে চোখের সামনেই বসতভিটা ধরলার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন আশ্রয় নিয়েছেন অন্য জায়গায়।

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর বর্ষা আসার আগেই ধরলার ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বর্ষাকালে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যাপ্ত বাজেট পাইনি। ভাঙন এলাকায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে, যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।'

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রম্নত বিতরণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে