শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ভেজাল গো-খাদ্যে বিপাকে মহাদেবপুরের খামারিরা

নিম্নমানের ভোজ্যতেলে সয়লাব নীলফামারীর হাট-বাজার

এস এ প্রিন্স, নীলফামারী
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

নীলফামারীসহ এতদাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে নিম্নমানের ভোজ্যতেল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পরিমাণে কেজি প্রতি ২০০ মিলি লিটার কম দেওয়া হলেও তদারকির ব্যবস্থা অপ্রতুল বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

জানা যায়, এ অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে বাংলাদেশ স্টান্ডড় অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)-এর অনুমোদন বিহীন বেশ কটি কোম্পানি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে ভোজ্যতেল (সয়াবিন তেল) বাজারজাত করে আসছে। প্রতিটি ব্র্যান্ডের প্যাকেজেই তেলের পরিমাণ কম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ৫ লিটারের তেলের বোতলে ৪২০ মিলি মিটার, ১ লিটারের বোতলে ৮৪০ মিলি লিটার ও ২ লিটারের বোতলে ১৭০০ মিলি মিটার করে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব তেলের বিএসটিআইর অনুমোদন না থাকলেও বোতলের গায়ে বিএসটিআইর স্টিকার ঠিকই লাগানো আছে। এভাবেই প্রতারিত করা হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। একটি সূত্র জানিয়েছে, পাশের পঞ্চগড় জেলার গহীন গ্রামে এসব কারখানা গড়ে উঠেছে। আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে। এমনি একটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাঝগ্রামে 'ভাই- বোন এন্টারপ্রাইজ'। এ কোম্পানি স্টার ও পাইলট নামে সয়াবিন ও পাম ওয়েল বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে কোম্পানির প্রোপাইটর ইউসুফ আলী জানান, 'বিএসটিআই-র অনুমোদন নেই। তবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করছি।'

একই এলাকায় মেসার্স প্যারেন্টস অয়েল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানি নাইট, চমক, চয়েস নামে সয়াবিন ও পাম ওয়েল বাজারজাত করছে। এই কোম্পানির মালিক ইব্রাহিম আজিজ রুবেল জানান, 'বিএসটিআই'র কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। উৎপাদন করে বাজারজাত করছি পরীক্ষামূলক ভাবে।'

এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, 'ইতোমধ্যেই আমরা লিটার পরিমাপ যন্ত্র নিয়ে এসেছি। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করব। তবেই বোঝা যাবে কিভাবে তারা পণ্য বাজারজাত করছে।'

পঞ্চগড় জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'আমরা এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছি। ইতিপূর্বে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছি। অভিযোগ আবারও পেলে ব্যবস্থা নেব।'

এদিকে আমাদের মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি ইউসুফ আলী সুমন জানান, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাট বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে ভেজাল গো-খাদ্য। খামারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এতে উপজেলার কয়েকশ খামারি প্রতারিত হচ্ছেন। খামারিরা বলছেন, ভেজাল পশুখাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর, বিক্রি বন্ধ করা না গেলে তারা হুমকির মুখে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ২০-২২টি দোকানের আড়ালে চালের পচা ব্রানের সঙ্গে কুঁড়া ও আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল পশুখাদ্য। এসব পশুখাদ্য তৈরি করে মহাদেবপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট বাজারে বিক্রি করছে একটি চক্র।

উপজেলার খাজুর এলাকার খামারি তাজুল ইসলাম বলেন, ভেজাল গো-খাদ্যের কারণে গরু যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার গোলাম রব্বানী বলেন, উপজেলায় অনেক গবাদিপশু পালন করা হয়ে থাকে। রাইচ ব্রানের সঙ্গে কোনোক্রমেই অন্য কিছু মেশানো যাবে না।

এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিলন বলেন, যেসব অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গো-খাদ্যে তৈরি ও বাজারজাত করছেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে