সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
মানিকছড়িতে অপরিপক্ব আম ঝরে পড়ায় শঙ্কা চাষিদের

চুনারুঘাটে বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে জমির

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে গত দুই-তিন দিনের বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে বোরো ক্ষেতসহ ফসলের জমিতে। এতে করে ফসলি জমিতে সবুজে সমারোহের মাঝে সজীবতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বোরো ধান তথা মাঠের ফসলের জন্য এই মুহূর্তে বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন ছিল। উপজেলার কৃষকরা বোরো চাষের উপর নির্ভরশীল। ক্ষেতের অন্যতম উপকরণ হলো সেচ দেওয়া। যা বৃষ্টির ফলে পাওয়া গেছে। উচ্ছ্বাসিত উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা। এদিকে বৃষ্টি না হওয়াতে বোরো ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের জমিতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমির বিভিন্ন রকম ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা পাবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। কাচুয়া এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, এ বছর শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরো ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় বোরো ধানের অঙ্কুর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের অঙ্কুর বৃদ্ধি ও ফসলের জন্য ভালো হয়েছে।

রাণীরকোট এলাকার কৃষক শ্রীবাস চন্দ্র দেবনাথ বলেন, 'বোরো ক্ষেত শুকিয়ে থাকায় প্রতিদিন বোরো জমিতে পানি দিতে হতো। বৃষ্টি হওয়ায় একটু স্বস্তি পেলাম। আশা করছি এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হবে।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ক্ষেতসহ অন্যান্য কৃষি জমির ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এছাড়া আম, কাঁঠাল দ্রম্নত বাড়বে এবং ঝড়ে পড়া বন্ধ হবে।

এদিকে মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আমের মুকুল বেশি আসলেও আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে ঝড়ে পড়ছে অপরিপক্ব আম বা আমের গুটি। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের পাশাপাশি আমের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এ অঞ্চলের আমচাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আর হতাশ না হয়ে বাগান মালিকদের আমগাছের গোড়ায় পানি সেচ, নিয়মিত পরিচর্যা ও বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, চলতি আম মৌসুমের শুরুতে বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুকুল এসেছিল। হঠাৎ ঘনকুয়াশা, তাপদাহ, শিলা বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ায় অনেকটা নষ্ট হচ্ছে আমের গুটি। আর এ বছর ৮০-৯০ ভাগ ফলনের আশা নিয়ে বুক বেঁধেছিলেন মানিকছড়ির আমচাষিরা। কিন্তু কিছুদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি। যদিও কেউ কেউ রাতদিন সেচ ও স্প্রে করে চেষ্টা করছেন আমগুলোকে বাঁচানোর। শুরু থেকে পরিচর্যা না করায় বেশি ঝরছে দেশি আমের গুটি। ফলে এ বছর আম উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে চাষি ও বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, চলতি মৌসুমে প্রচুর আমের মুকুল আসলেও পরবর্তী বৈরী আবহাওয়া, কুয়াশায় মহা (ছত্রাকনাশক রোগ) লেগে অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। আর গুটি আসার পর প্রচন্ড তাপদাহে এবং শিলাবৃষ্টি ও পানির অভাবে প্রতিটি আমবাগানে বিপুল পরিমাণ আমের গুটি ঝরে পড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কয়েকদিন এ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে আরও আমের গুটি ঝরে পড়ার আশংকা করছেন তারা। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে আমের ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এ অঞ্চলের আম চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহি উদ্দিন আহম্মদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৪৫০ হেক্টর জমির বাগানে ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমের গুটি ঝরে পড়ার বিষয়ে গাছের গোড়ায় পানির সেচ এবং বালাই ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে আমচাষিদের। তবে, চলতি মৌসুমে শতভাগ গাছে মুকুল আসলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা গুটি থেকেই নষ্ট হচ্ছে। এরপরও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান বলেন, বর্তমানে রোদ ও গরমের কারণে যে গুটি ঝরছে সেটা স্বাভাবিক। চাষি ও ব্যবসায়ীদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। বেশি গুটি ঝরলে গাছে পানি সেচ দিতে হবে। সাধারণত চারটি কারণে আমের গুটি ঝরে। এর মধ্যে পুষ্টির অভাব, পোকার আক্রমণ, রোগের আক্রমণ ও ধারণ ক্ষমতার বেশি হলে। তবে বড় ধরনের ঝড় বৃষ্টি না হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তারপরও গাছে পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে