সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম
  ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের কেনাবেচা -সংগৃহীত

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠেছে বেচাবিক্রি ও কেনাকাটা। দিনের বেলা দাবদাহের কারণে ক্রেতা কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সেহরি পর্যন্ত বিকিকিনি চলে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ক্রেতার উপস্থিতি তত বাড়ছে। এবার চট্টগ্রামে মেয়েদের পছন্দের পোশাক মাহরত নামে ইন্ডিয়ান থ্রিপিস। এটিতে গাউনের বৈশিষ্ট্য থাকায় তরুণীরা পছন্দ করছেন।

সন্ধ্যার পর থেকে সেহরি পর্যন্ত নগরীর স্যানমার, চট্টগ্রাম শপিং কমপেস্নক্স, সিডিএ মার্কেট, অলঙ্কার শপিং কমপেস্নক্স, টেরিবাজার, খুলশী টাউন সেন্টার, নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, টেরিবাজার, আগ্রাবাদ লাকী পস্নাজা, সিঙ্গাপুর মার্কেট, চকবাজার মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বালি আর্কেড, ফিনলে স্কয়ারসহ একাধিক মার্কেট বিভিন্ন কাপড়ের শোরুমে দল বেঁধে কেনাকাটা করছেন সব বয়সের ক্রেতা।

স্যানমার ওসান সিটির বিক্রেতারা বলছেন, গরমের কারণে দিনে তেমন ক্রেতা থাকে না। বিক্রিও তেমন হয় না। ইফতারের পর থেকে দল বেঁধে কেনাকাটা করতে আসেন ক্রেতারা তখন বিক্রি ভালো হয়। সেহরি পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে।

খুলশী টাউন সেন্টারে কেনাকাটা করতে দম্পতির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দিনে প্রচন্ড গরম। রোজা রেখে একদম বের হতে ইচ্ছে করে না। তাই পরিবারের সবাই মিলে রাতে কেনাকাটা শেষ করে সেহরির সময় ঘরে ফিরব।

স্যানমারে কেনাকাটা করতে আসা তরুণ জোহেব খান বলেন, 'এবার ঈদের পোশাক, জুতাসহ সবকিছুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। বিক্রেতারা সুযোগ পেলেই বলছে, বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় পোশাক সরবরাহ কমে গেছে। এ ছাড়া এলসির কারণে বাইরে থেকে পোশাক বেশি আনা সম্ভব হচ্ছে না তাই দাম বেশি।'

এদিকে টেরিবাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রবেশপথ থেকে সবকটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতার চাপে বিক্রয়কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। তবে বর্তমানে থান কাপড়ের দোকানে ক্রেতা কম হলেও ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। এবার বিক্রি ভালো হওয়ায় স্বস্তিতে আছেন টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, টেরিবাজারে গত এক দশকে প্রায় অর্ধশতাধিক ওয়ানস্টপ শপিংমল গড়ে উঠেছে। যেগুলোয় এক ছাদের নিচে মিলছে নারী-শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সিদের প্রয়োজনীয় পোশাক। তাই ক্রেতারা এখানে পরিবারে সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা শেষ করতে পারে।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন জানান, টেরিবাজার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাজার। চট্টগ্রাম অঞ্চলের থান কাপড়ের জন্য এই মার্কেট বিখ্যাত। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কাপড় কিনে নিয়ে যান বিক্রির জন্য। টেরিবাজারে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় দোকান রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, টেরিবাজার শাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ডসহ নানা দেশ থেকে শাড়ি ও অন্যান্য কাপড় এখানে আসে। শবেবরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত এই বাজারে ভালো শাড়ি বিক্রির পরিমাণ উলেস্নখ করার মতো।

বিক্রেতারা বলেন, বিগত বছরগুলোয় ঈদের শেষ মুহূর্তে এসে বেচাকেনার ধুম পড়লেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকরা আগেভাগে কেনাকাটা শুরু করেছেন।

নগরীর পাশাপাশি পাশের উপজেলাগুলোয়ও জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মার্কেটগুলো জমজমাট থাকে। চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি সীতাকুন্ডে গত কয়েকদিনের তীব্র গরম উপেক্ষা করে ক্রেতারা পছন্দের শাড়ি-কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিতে ঈদের বাজারে ছুটে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকছেন প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা। কেউ কেউ ইফতার সারছেন আশপাশের হোটেল-রেস্টুরেন্টে। সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা এলাকা থেকে আসা রাজিয়া সুলতানা ঈদের শপিং করতে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তিনি জানান, প্রতিবছর ঈদের কাপড় কেনার জন্য সীতাকুন্ড পৌরসদরের বাজারে আসেন। তার মতে, এ বছর কাপড়ের দাম অনেকটা বেশি। মেয়েদের বিভিন্ন আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের দাম আরও নাগালের বাইরে তবে এ বছর গাউন ও কাতান থ্রি-পিসের চাহিদা একটু বেশি বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড কলেজ রোডের নূরুল আলম নিউমার্কেটের এক দোকানি বলেন, এবার দশ রমজান থেকে সীতাকুন্ড ঈদের বাজার জমজমাট। এখন মানুষ ঈদের দুই-তিনদিন আগের জন্য বসে থাকে না। প্রথম রমজান থেকে কেনাকাটা শুরু করে। তিনি বলেন, এবার মেয়েদের জনপ্রিয় পোশাক নাইরা নামে ইন্ডিয়ানি থ্রি-পিস। থ্রি-পিসের পাশাপাশি গাউনের বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি এই ঈদে তরুণীদের প্রথম পছন্দের ড্রেস। এ ছাড়া অর্গানজা থ্রি-পিস, লিনেন থ্রি-পিস, জর্জেট থ্রি-পিসসহ মেয়েদের বিভিন্ন বাহারি পোশাকের সমাহার রয়েছে তার দোকানে।

মেয়েদের আধুনিক পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছেলেরাও নিজেদের জন্য সেরা পোশাকটি কিনতে ছুটছেন এ মার্কেট ও মার্কেটে। পরিপাটি করে নিজেকে ঈদে সাজাতে ছেলেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজেদের পছন্দের পোশাক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে