সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াইহাজারে থামছে না জুয়ার আসর, এক মাসে আটক ৪০

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় গ্রামে গ্রামে জুয়া খেলা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কোথাও প্রকাশ্যে, আবার কোথাও গোপনে বসছে জুয়ার আসর। জুয়ার খপ্পরে পড়ে একদিকে নিম্নআয়ের মানুষ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে এর প্রভাবে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। বাড়ছে নানা অপরাধও। এ জুয়ার আসর বসাতে দূরবর্তী চক, পরিত্যক্ত বাড়ি, নীরব রাস্তা ও কোনো পুরনো স্থাপনার মতো স্থানগুলো বেছে নেয় জুয়াড়িরা। গত এক মাসে পুলিশ অন্তত ৪০ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। তবু ভয় নেই জুয়াড়িদের মনে।

গত ১২ আগস্ট একদিনেই উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের প্রভাকরদী এলাকা থেকে ১৫ জুয়াড়িকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় জুয়ায় ব্যবহৃত ওড়না, একশ' ৫০ পিস তাস ও নগদ ১৫ হাজার ৫শ' ৮০ টাকা জব্দ করা হয়। এদের মধ্যে মাদক বিক্রেতা ও কয়েকজন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ জানায়। ৭ আগস্ট দাসিরদিয়া গ্রামের চকে একটি পরিত্যক্ত দালানে জুয়ার আসর থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, গোপালদী পৌর এলাকা, রামচন্দ্রদী, দড়িকান্দি, মানিকপুর, গাজীপুরা, বিশনন্দি লঞ্চঘাট, ফতেহপুর কবরস্থান, জালাকান্দি, মাহমুদপুর, টেটিয়া, খাগকান্দা, দয়াকান্দা, বাঘানগরসহ বিভিন্ন গ্রামে তিন তাস নামে চলে আসছে অবাধ জুয়ার আসর। জুয়ার আসর বসে সন্ধ্যার পর থেকে। তবে অনেক সময় দিনেও জুয়ার আসর বসে। এসব জুয়ার আসরে অটোচালক, পাওয়ারলুম শ্রমিক ও বখাটেদের সংখ্যাই থাকে বেশি। এলাকার উঠতি যুবক, আলোচিত জুয়াড়িরা এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

এদিকে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন আড়াইহাজারের সবাই। জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করতে জুয়াড়িরা চুরি-ডাকাতিসহ নানান ধরনের অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। মেঘনা তীরবর্তী ইউনিয়ন খাগকান্দায় জুয়া চোরেরা জুয়া ও নেশার টাকা জোগাড় করতে টিউবওয়েল চুরি করতে শুরু করেছে। এমনকি লোহা-লক্কর জাতীয় জিনিসপত্র যেমন- দা, বঁটি, কোদাল, কাঁচি ও বালতি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

বালিয়াপাড়া গ্রামের গোলাম রাব্বানী জানান, এখন আর জুয়ার উপকরণ নিয়ে ঘুরতে হয় না। একটি টাচ (এন্ড্রয়েট) মোবাইল থাকলেই জুয়া খেলা শুরু করা যায়। মোবাইলে লুডু খেলার হারজিত নিয়ে জুয়া খেলা হয়। আবার ক্রিকেট খেলার প্রতি বলে, প্রতি ওভারে এমনকি কোন দল জয়লাভ করবে তা নিয়ে জুয়া খেলা হয়। 

বিশনন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া জানান, জুয়াড়িদের নিয়ে তার এলাকার পরিবারের লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার শেষ নেই। পুলিশে ধরলে কোর্টে গিয়ে টাকা-পয়সা খরচ করে জামিনে বের করতে হয়। জুয়াড়িরা নিয়মিত জুয়া খেলে। কিন্তু নিয়মিত সংসারে টাকা দেয় না। বাজার করে না। এছাড়া তার এলাকায় গত ১৫ দিনে ১০টি টিউবওয়েল চুরি গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে সামাজিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে যাদের সবগুলো জুয়াড়ি ও মাদকসেবী।

প্রাবন্ধিক ও গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবুল বলেন, জুয়া অন্যান্য সামাজিক ব্যাধির মতো, এটিও একটি ব্যাধি। যা পরিবার-সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এই ব্যাধি থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক সচেতনতা খুব জরুরি।

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, জুয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে এ ব্যাধি থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে