শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাব্য হারিয়ে পোরশার পুনর্ভবা এখন বালুচর

পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
নওগাঁর পোরশার নিতপুর সীমান্তের পাশ দিয়ে বলে চলা পুনর্ভবা নদীর তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে ক্রিকেট খেলছে শিশুরা -যাযাদি

এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা নাব্য হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। পুনর্ভবা নওগাঁর পোরশা উপজেলার সীমান্তবর্তী নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত। নদীতে এক সময় চলাচল করত অসংখ্য নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। ব্যবসায়ীদের ব্যবসার কাজে গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, নাচোলসহ বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। ওইসব উপজেলা বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাট-বাজারে ব্যবসার জন্য মাঝিমালস্নারা তাদের ছোট-বড় নৌকায় পাল তুলে ব্যবসায়ীদের ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই, গমসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়ে ছুটে চলতেন।

শুধু ওইসব পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোয় বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় নদীটি ছিল পূর্ন যৌবনা। নদীকে সহজ পথ ভেবে কম খরচে যাতায়াতের জন্য অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার শক্ত ভিত গড়ে তুলেছিলেন। আর অগনিত হাট-বাজারই নয়, এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক ব্যবসায়িক জনপদ। এ ছাড়া নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সবুজ ফসল ফলাতেন। এই পানিতে নানা ফসলে ভরে উঠত ফসলের মাঠ। কিন্তু ফসল থাকলেও সেই পানি এখন আর নেই। শ্যালো মেশিনের পানিতে চাষাবাদ করতে হচ্ছে কৃষকদের।

অন্যদিকে, জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রামগুলোয় অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাত-দিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। সেই মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলত। পুনর্ভবার সঙ্গে এখন জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। সে সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সেই ভরা যৌবনা পুনর্ভবা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। দুই পাশের পাড় হয়েছে কৃষি জমি। আর নদী গর্ভে জেগে উঠা উঁচু চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা। থমকে গেছে নদী আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনা জাগানো কর্মকান্ড।

নদীকেন্দ্রিক সম্ভাবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেওয়া হলে অন্তত বালুচরে পরিণত হতো না। খনন না করার ফলে নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। আর এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে অনেকে মনে করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে