কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড নামের দুটি ভাসমান তেল ডিপোয় ৬ বছর ধরে তেল নেই। এতে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরাসহ নৌ ও স্থলপথের বিভিন্ন যানের চালকদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বেকার হয়ে আছেন এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩শ' শ্রমিক।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আওতায় ১৯৮৯ সালে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির ৩টি ভাসমান তেল ডিপো স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে ডিপো ৩টি থেকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তেল ডিপো স্থাপনের কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানি বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে চিলমারী থেকে তাদের ডিপোটি সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি এ অঞ্চলে তেল সরবরাহ করে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এবং একই বছরের ২২ ফেব্রম্নয়ারি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড তেল শুণ্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য সংকট দেখিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর তেল সরবরাহ করেনি তেল ডিপো দুটি। অথচ ব্রহ্মপুত্র নদের এই রুট ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত ভারত থেকে পণ্য আনা-নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই রুটে চলাচল করছে ফেরি।
তেল ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম জানান, ডিপো দুটির অনুমোদিত ২২ জন ডিলার রয়েছেন। বর্তমানে ভাসমান বার্জ ডিপোয় তেল না থাকায় পার্বতীপুর বা রংপুর ডিপো থেকে তেল কিনে সড়কপথে আনতে অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়, ঘাটতি ও লেবার বেশি হয়। এর ফলে ক্রেতাদের বাড়তি দামে তেল কিনতে হচ্ছে।
লেবার সর্দার বেদারুল ইসলাম বাবু বলেন, ভাসমান ডিপো দুটি উপজেলার জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটানোর পর পার্শ্ববর্তী নারায়ণপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা, রৌমারী, রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ, কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে তেল সরবরাহ করতো। এতে প্রতিদিন চাহিদা ছিলো প্রায় ৭৫০ ব্যারেল বা ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদে চালিত চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ব্যারেল বা ২০-৩০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা ছিলো। সবমিলিয়ে সে সময় এই বার্জডিপো দুটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯শ' ব্যারেল তেল সরবরাহ হতো।
অন্যদিকে, ডিপো দুটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেখানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত ১৭ কর্মচারীসহ প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩'শ শ্রমিকের কাজ না থাকায় প্রায় ৬ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ ব্যাপারে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের রংপুর ডিপো ও চিলমারী বার্জ ডিপো'র ডেপুটি ম্যানেজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শরীফুল ইসলাম ডিপোটি স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।