শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা পেঁয়াজের বিকল্প গুঁড়া পেঁয়াজ, কাটবে সংকট

বগুড়ার গবেষকদের উদ্ভাবন
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০৬
উদ্ভাবিত গুঁড়া পেঁয়াজ

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র পেঁয়াজ সংকট মোকাবিলায় নতুন পথের উদ্ভাবন করেছে। পেঁয়াজ প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণের মাধ্যমে কাঁচা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে গুঁড়া পেঁয়াজ ব্যবহারের দেশীয় পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা। ছোট পরিসরেই উদ্যেক্তাদের মাধ্যমে সহজে গুঁড়া পেঁয়াজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি ছাড়াই পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মসলা গবেষকরা বলছেন। এছাড়া সাধারণভাবে ঘরেই গুঁড়া পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে দেশীয় পদ্ধতিতে এই গুঁড়া পেঁয়াজের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষক ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িতরা বলছেন, কাঁচা পেঁয়াজ থেকে গুঁড়া পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ালে সাধারণভাবে পেঁয়াজের সংরক্ষণজনিত যে ৩০ ভাগ ঘাটতি (অপচয়) থাকে তাও আর এই পদ্ধতিতে থাকবে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বছরে পেঁয়াজের বর্তমান চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন ২৩ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন। ১১ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রতিবছর ঘাটতি থাকে। যা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। দেশীয় উৎপাদনের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চারা থেকে উৎপন্ন পেঁয়াজ। এটা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় বলে বাজারে এর চাহিদাও বেশি। আর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ মেটায়। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও রয়েছে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পোস্ট হারভেস্ট) ড. মো. মাসুদ আলম এবং ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্যানতত্ত্ব) কৃষিবিদ নুর আলম চৌধুরী জানান, সংরক্ষণের সময় সব ধরনের পেঁয়াজে অন্তত ৩০ ভাগ ঘাটতি বা অপচয় হয়। দেশীয় জাতের পেঁয়াজের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ১০ থেকে ১১ টন হলেও গ্রীষ্মকালীন বারি-৫ পেঁয়াজের উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৩ টন পর্যন্ত। উচ্চ ফলনশীল এই পেঁয়াজ দেশীয় বা স্থানীয় জাতের চেয়ে হেক্টরপ্রতি দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন হলেও কৃষক পর্যায়ে এর উৎপাদন সীমিত রয়েছে। স্থানীয় জাতের দেশি পেঁয়াজের চেয়ে বারি ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও নানা কারণে কৃষক পর্যায়ে এর উৎপাদন ছড়ানো যায়নি। এর অন্যতম কারণ- এসব পেঁয়াজের সংরক্ষণের সময় ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত। এজন্য অনেক কৃষকই গ্রীষ্মকালীন বারি জাতের পেঁয়াজে তেমন আগ্রহী নন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গবেষক মাসুদ আলম বলেন, তাদের উদ্ভাবিত পেঁয়াজের গুঁড়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সংরক্ষণে সময়জনিত আর কোনো সমস্যা থাকবে না। কারণ পেঁয়াজের গুঁড়া অনায়াসে এক বছর প্যাকেটজাত করে সংরক্ষণ করা যায়। এতে বারী জাতের উচ্চ ফলনশীন গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের পর তা গুঁড়া করে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করলে সংরক্ষণ ঘাটতি যেমন থাকবে না। তেমনি কৃষকও ন্যায্যমূল্য পাবে। ফলে উচ্চ ফলনশীল বারি জাতে পেঁয়াজে কৃষকদের আগ্রহও বাড়বে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ড. মাসুদ আলমের তত্ত্বাবধানে গবেষণাগারে গুঁড়া পেঁয়াজের উৎপাদন চলছে। তার গবেষণার বিষয় ছিল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ। তিনি জানালেন, অনেক দেশে পেয়াঁজের গুঁড়ার প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এ কারণে তিনি প্রায় ৩ বছর ধরে পেঁয়াজের প্রক্রিয়াজাতকরণ বা পেঁয়াজ গুঁড়া করে সংরক্ষণের বিষয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, খুব সাধারণভাবে যেকোনো উদ্যোক্তা ঘরে বসেই এই পেঁয়াজের গুঁড়া উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে সংরক্ষণ নিয়ে সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি পেঁয়াজ সংকট আর থাকবে না। এটির পদ্ধতি খুব সাধারণ। খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ প্রথমে সস্নাইস করে ভাপ দিতে হবে। পরে তা শুকিয়ে সোডিয়াম মেটাবাইসারফেট দ্রবণে ৪/৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর তা শুকাতে হবে। এরপর সাধারণ বেস্নন্ডিং মেশিনেই এটি গুড়া করা যাবে। তিনি আরও জানান, এটি নিশ্চিন্তে এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করার কথা তারা বললেও আসলে এই পেঁয়াজের গুঁড়া ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। মসলা গবেষকদের বক্তব্য, বারি জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়ে সংকট মেটানোর ক্ষেত্রে পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ তথা গুঁড়া পেঁয়াজ অন্যতম পথ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে