শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন উচ্চতায় রিজার্ভ

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রিজার্ভ নতুন এ উচ্চতায় পৌঁছায় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব।

করোনাভাইরাসের তান্ডবে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের আমদানি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্তই আমদানি ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশিদের বিদেশযাত্রাও প্রায় বন্ধ।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস বা জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। চলতি ডিসেম্বর মাসেও আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। ১-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধিই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ নতুন এ উচ্চতায় উঠেছে। এছাড়া রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা এবং বিদেশি ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে উলস্নম্ফন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিতে ধীরগতি ও বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক যায়যায়দিনকে বলেন, রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারকে সাহস জোগাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। গত ২৯ অক্টোবর তা প্রথমবারের মতো ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

৫ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৭ নভেম্বর তা ফের ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

গত কয়েক বছর ধরেই রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ১০ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবরে। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। অক্টোবরের ৮ তারিখে ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই অবস্থান করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে