পাবনা জেলার সর্বত্রই মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। দৃষ্টি যত দূরেই যাক, হলুদের রং সৌন্দর্য প্রিয় মানুষকে চলতি পথে থমকে দেয়। সরিষা ফুলের সঙ্গে ছবি উঠানোটা এখন হয়ে গেছে শৌখিনতা।
গতবারের মতো এবারও এ জেলাতে সরিষার ভালো ফলন হওয়ায় আশাবাদী কৃষি বিভাগ ও চাষিরা। আর এই সরিষা ক্ষেতকে ঘিরেই মধু আহরণে ব্যস্ত মৌয়ালরা। জমির পাশে ফাঁকা স্থানে কাঠের বাক্স স্থাপন করে তারা মধু সংগ্রহ করছেন।
জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৃষক রেজাউল করিম গতবারও দুই বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। ফলন ভালো পাওয়ায় এবারও প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। রেজাউল দাবি করেন, এর আগে তিন বিঘাতে সাড়ে চার মণ সরিষা পেয়েছিলেন। ক্ষেতের পাশে মৌচাষের কারণে সরিষা ফুলে পরাগায়ন ভালো হয়েছে। আর গতবার ওই কারণেই তিনি প্রায় ৬ মণ সরিষা পেয়েছেন। এজন্য তাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়নি। এবারও তিনি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। একই সঙ্গে মৌয়ালরা বাক্স বসিয়েছেন মধু সংগ্রহ করতে। তিনি আশাবাদী ফলন এবারও ভালো পাবেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। জেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, আশা করা হচ্ছে, এ বছর সরিষার উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন সরিষা পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। ক্ষেতে মাঝে মাঝে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। মৌচাষিরা জানান, সরিষার ফুল প্রায় দুই মাস জমিতে থাকে। এই দুই মাস সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে প্রায় ৩৫ হাজার মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। আশা করছেন, পাবনা থেকে এবার প্রায় ৪০ টন মধু পাওয়া যাবে। মৌমাছির বাক্স স্থাপন করায় যেমন মধু পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে সরিষার উৎপাদনও বেড়েছে।
উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর পাবনা থেকে ১০০ টন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে।