শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
বিস্ময়কর!

হেঁটে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার পাহাড় জয় ৩ বছরের জারার!

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
আনন্দ আর কৌতূহল নিয়ে বান্দরবানের মারায়নতং পাহাড়ে উঠছে জারা -যাযাদি

পাবনার চাটমোহরের ৩ বছরের জারা পায়ে হেঁটে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার বান্দরবানের মারায়নতং পাহাড় জয় করেছে। শিশু সাবিলা মোস্তাফিজ জারা চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি বাবা-মার সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। জারা'র পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠা-নামার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সেখানকার পর্যটক গাইডরাও। তারা জানিয়েছেন, এর আগে এত কম বয়সি শিশু পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠেনি। জারা'র এমন কৃতিত্বে খুশি ও গর্বিত বাবা-মা, স্বজন, প্রতিবেশীরা। আগামীতে আরও বড় পাহাড় জয় করার প্রত্যাশা তাদের। পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের চৌধুরীপাড়া মহলস্নার ফ্রিল্যান্স ওয়েব সাইট ডেভেলপার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও সাদিয়া ইসলাম ইলা দম্পতির একমাত্র সন্তান জারা। ভ্রমণপিপাসু বাবা-মায়ের মুখে বিভিন্ন সময়ে পাহাড় আর সমুদ্রে ঘোরাঘুরির গল্প শুনে ৩ বছরের জারা আধো আধো কথায় বাবা-মায়ের কাছে আবদার করত পাহাড়-সমুদ্র দেখার। মেয়ের আবদার রাখতে গত ৫ জানুয়ারি চাটমোহর থেকে ট্রেনে বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাবা-মা। ৬ জানুয়ারি দুপুরে আলীকদম উপজেলার আবাসিক এলাকার মিরিঞ্জা রেঞ্জে পৌঁছায়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়ে ওঠা শুরু করেন তারা। তাদের সঙ্গী ৩ বছরের মেয়ে জারাকে কোলে নিয়ে পাহাড়ে ওঠাতে ভাড়া করা হয় পর্যটক গাইড। কিন্তু জারা কারো কোলে না উঠে নিজের পায়ে হেঁটে মারায়নতং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়। অত্যন্ত খাড়া এই পাহাড়ে উঠতে তাদের সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। এতটা পথ ও সময় যেখানে উঠতে বড়রা হাঁপিয়ে ওঠে, সেখানে মেয়ের পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠায় হতবাক বাবা-মা। বাবা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'প্রথমে ভাবিনি জারা হেঁটে উঠবে, তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হবে ভেবেছিলাম। এজন্য গাইডও ভাড়া করেছিলাম। কিছু টাকাও গাইডকে দিয়েছিলাম যাতে কিছু চকলেট বিস্কুট কিনে জারার সাথে সখ্য করে কোলে নিতে পারে। কিন্তু আমাদের মেয়ে বরং কোলে নিলেই কান্নাকাটি করত। পরে সে একাই আমাদের সঙ্গে হেঁটে পাহাড়ে ওঠে। শুধু হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠাই নয়, নামার সময়েও নিজেই হেঁটে নিচে নেমেছে।' মা সাদিয়া ইসলাম ইলা বলেন, আমাদের জানা মতে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ খাড়া পাহাড় হলো ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়নতং পাহাড়। ওঠা খুবই কষ্টকর। আমরা উঠতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু আমাদের মেয়ের মধ্যে কষ্টের কোনো চিহ্ন দেখিনি। বরং আমরা মাঝপথে দাঁড়ালে জারা আমাদের তাড়া দিত। যখন সে পুরো পথ হেঁটে উপরে উঠে গেল তখন আমি নিজেই রীতিমত হতবাক হয়ে গেলাম যে এটা কীভাবে সম্ভব হলো! জারার এমন কৃতিত্বে বিস্মিত ও গর্বিত তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। জারার নানা আলহাজ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নাতনী যে এইটুকু বয়সে পাহাড়ে হেঁটে উঠেছে এটা জেনে খুবই খুশি লাগছে। প্রতিবেশী ডা. জাহানারা খাতুন বলেন, 'আমি একবার পাহাড়ে গিয়ে মাঝপথে থেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু জারা যে কাজ করেছে তাতে আমরা বিস্মিত।' এ বিষয়ে বান্দরবনের আলীকদম উপজেলার পর্যটক গাইড ইয়াসিন আলী, জামাল হোসেন ও মুন্না হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে জানান, তিন বছরের শিশু জারা হেঁটে মারায়নতং পাহাড়ে উঠেছে এটা সত্য, তারা শিশুটির সঙ্গে ছিলেন সব সময়। তারাও বিস্মিত শিশু জারার এমন মনোবল দেখে। এর আগে তিন বছর বা চার বছর বয়সি কোনো শিশুকে তারা পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠতে দেখেননি বা শোনেননি। এর আগে সাত বছর বয়সি এক শিশু পাহাড়ে উঠেছিল। তবে মাঝপথে তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হয়েছিল বলে জানান পর্যটক গাইডরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে