শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস আজ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে

জলবায়ুর পরিবর্তন স্পষ্টতই মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। উপকূলের মানুষ প্রতিনিয়ত জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। জলবায়ুর প্রভাবে এ পর্যন্ত ঝুঁকিতে উপকূলের সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ
আলতাব হোসেন
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি। সময়ে বৃষ্টি হয় না, আবার কখনো বৃষ্টির বিরামহীন যাতনা। শীতে অনুভূত হয় না ঠান্ডা আমেজ। বৈশাখেও দেশের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই করছে। উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে খরায় চৌচির ফসলের মাঠ। শুকিয়ে গেছে পুকুর, খালবিল ও ছোট নদী। দেশের এক প্রান্ত রাজশাহীতে দাবদাহে ফসল পুড়ছে, অন্য প্রান্তে হাওড়ে আগাম বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ।

জলবায়ুর পরিবর্তনের এ রকম পরিস্থিতে আজ ২২ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'আমাদের পৃথিবী-আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে'। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, পৃথিবীকে নিরাপদ বাসযোগ্য রাখতে জলবায়ু সংকট এবং পরিবেশ দূষণ রোধে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবিতে ভার্চুয়ালি নানা আলোচনায় দিবসটি পালিত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের গড় তাপমাত্রা বছরের এপ্রিল-মে মাসে এক ডিগ্রি এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি বেড়েছে। বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় দৃশ্যমান প্রভাব হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি। দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানির আগ্রাসনে নারীদের গর্ভপাতের হার বেড়ে যাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থান এবং বদ্বীপ-প্রধান দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন-ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, নদীভাঙন বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে, তার প্রভাব দেশে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান। জলবায়ুর পরিবর্তন স্পষ্টতই মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলছে। উপকূলের মানুষ প্রতিনিয়ত জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। জলবায়ুর প্রভাবে এ পর্যন্ত ঝুঁকিতে উপকূলের সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ।

বাংলাদেশের ঋতু ছয়টি। অর্থাৎ বছরে ছয় ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করে এদেশে। এ দেশের আবহাওয়া খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। বর্তমানে দেশে ছয় ঋতু টের পাওয়া যায় না। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত ছাড়া অন্য কোনো ঋতু তো বোঝাই যায় না। বর্ষায় বৃষ্টির দেখা মেলে না, আবার কখনো বৃষ্টি হয় অবিরাম। পৌষ মাসে শীতের দেখা মেলে না। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটছে।

বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বেড়ে চলছে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধসের মাত্রাবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে দুই থেকে তিন বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্রাফটেরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।

নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইএলইউর সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় ঢাকা শহরের বায়ুর গুণগতমানের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃতু্য হচ্ছে।

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তথ্যানুযায়ী বিশ্বের ছয়টি দুর্যোগ প্রবণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। প্রচন্ড তাপে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে অসুস্থতার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে অপরিণত বয়সেও মৃতু্য হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এরই মধ্যে অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে পড়ছে। বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল হান্নান যায়যায়দিনকে বলেন, 'বৈশ্বিক উষ্ণতা ইতোমধ্যে এক ডিগ্রি বেড়েছে। বর্তমান হারে কার্বন নির্গমন হতে থাকলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে তিন ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে। অথচ এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়ানক পরিণতি এখন পৃথিবী দেখছে। এই তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে পৃথিবীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিল্পোন্নত ৩৯টি দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ চীন, ভারত, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এখনই হুঁশিয়ার করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে