শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
মার্কেট খোলা মধ্যরাত পর্যন্ত

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জমজমাট শপিংমল

হাসান আরিফ
  ১২ মে ২০২১, ০০:০০
ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা

ক্রেতাদের ভিড় দেখে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে বোঝার উপায় নেই যে করোনাভাইরাসের কারণে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। সরকার বার বার সতর্ক করার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না ক্রেতা-বিক্রেতারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। সরকার নির্ধারিত সময় রাত ৮টা হলেও খোলা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত।

বুধবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। অফিসের কাজ শেষ করে ফিরতি পথে অনেকেই কেনাকাটা সেরে নিয়েছেন। ব্যস্ততার কারণে যারা নতুন কাপড় কিনতে পারেননি বা আরও কিছু কেনাকাটা বাকি রয়েছে, তাদের ভিড়টাই বেশি শপিংমলগুলোতে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট বিধিনিষেধ অমান্য করে খোলা রাখা হচ্ছে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত।

রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে এতটাই ভিড় যে পথচারী হাঁটারও সুযোগ নেই। একই অবস্থা নিউমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা শপিংমল এলাকায়। সেই সাথে পালস্না দিয়ে রয়েছে হকারদের হাঁকডাক। এসব এলাকার ক্রেতাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি।

প্রতিটি শপিংমল, মার্কেটে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই বললেই চলে। তবে বেশিসংখ্যক ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও, বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। আর বড় বড় শপিংমলের ফুড কোডে তো মাস্ক রাখার সুযোগই নেই।

সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটের নাফিসা ওড়না দোকানের ম্যানেজার মো. নূর হোসেন জানালেন, ক্রেতারা সাধারণত ইফতারের পর আসে। বিভিন্ন মার্কেটে ?ঘুরতে ঘুরতে তাদের রাত হয়ে যায়। তাই মধ্যরাত পর্যন্ত মার্কেট খোলা না রেখে উপায় নেই। বাধ্য হয়েই খোলা রাখতে হচ্ছে। আর বিধিনিষেধের কারণে মানুষের মধ্যে কোনো আতঙ্ক না থাকায় বিক্রিও ভালোই হচ্ছে।

মার্কেটের স্বাস্থ্যবিধি আর ভিড় বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, যা ভিড় দেখা যাচ্ছে তার সবটাই ফুটপাতকেন্দ্রিক। মার্কেটের ভেতরে তেমন ভিড় নেই। আর স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কোনো আপস করা হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লোকসান ঠেকিয়ে বিক্রি বাড়াতে তুলনামূলক একটু ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে মূল্য ছাড়ের প্রতিযোগিতা। অন্যান্য ঈদের মতো জমজমাট না হলেও প্রত্যাশার তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার ফ্যাশন হাউজগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ও বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধেও ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা।

দোকানিরা জানান, ঈদের জন্য তাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। যেহেতু করোনাকালীন কঠিন সময় পার করছি, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মূল্য ছাড় দেওয়া হয়েছে যেন কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারি। ছাড়ের কারণে যেন ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে কেনাকাটার প্রতি। ঈদ উপলক্ষে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা উঠিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য।

বরাবরের মতো এবারও বিপণি বিতানগুলোতে শিশুদের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের গাউন, সারারা ও গারারার মতো তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি।

দোকানিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে তো মানুষের বের হওয়ার কথা না, কেনাকাটা করার কথাও না। কিন্তু মানুষ আসছে, তারা কিনছেনও। তবে দরাদরি করে কিনছেন। তাই ক্রেতা পেলে কম লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন দোকানিরা। এরপরও মানুষের আর্থিক অবস্থা তো আমরা বুঝি, সেজন্য কিছুটা দাম কমিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

তারা জানান, বেশিরভাগ মানুষই মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কিনেছেন। নিজেদের জন্য কিনতে দেখা যাচ্ছে কম। তবে দোকানে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক সঙ্গে থাকলেও খুলে রাখছে। গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা করছে না ক্রেতারা। দিন যত যাচ্ছে, ক্রেতা ততই বাড়ছে। কিন্তু ঈদের হিসাব করলে অনেক কম। তবে করোনাকালীন অবস্থা বিবেচনা করলে ক্রেতা মোটামুটি আসছে এবং বিক্রিও হচ্ছে।

এদিকে শেষ সময়ে এসে রাজধানীর জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে হতাশ ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, করোনাভাইরাসের আগের সময়গুলোতে রোজার শেষ দিকে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ শো-রুমগুলোতে বেশি আসতেন। এবার এমন ক্রেতা 'একেবারেই না আসায়' দামি জুতার বিক্রি কম। বেশি বিক্রি হচ্ছে মাঝারি ও কম মূল্যের জুতা। এর মধ্যে ছেলেদের ৩ হাজার টাকার মধ্যে এবং মেয়েদের ২ হাজার টাকার মধ্যে জুতাগুলো বেশি চলছে। ফলে টার্নওভার খুবই কম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে