শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন সেতু ও মসজিদে ফাটল

রিখটার স্কেলে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে রিখটার স্কেলে ৫.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৩০ সেকেন্ড।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে এই কম্পন অনুভূত হয়। মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৮। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ছিল কেন্দ্রের অবস্থান, যা ঢাকা থেকে পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রায় ৩৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।

রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, জামালপুর, খুলনা, বাগেরহাট, কুড়িগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থানে ভবন কেঁপে ওঠে। এতে দেশের কোথাও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

এদিকে ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রাম থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে গভীরতা ছিল ৪২ কিলোমিটার।

ইউরোপিয়ান সিসমোলজিক্যাল আর্থকোয়াক সেন্টার (ইএসএমসি) বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.৮। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।

তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের হাখা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পশ্চিমে এবং রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.১। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২.৮ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।

ভারত, ভুটান ও চীনের কিছু অংশেও কম্পনটি অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসজিএস।

এর আগে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সর্বশেষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সে সময় রাজধানীসহ চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানেও ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গিয়েছিল।

রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন

সেতু ও মসজিদে ফাটল

ভূমিকম্পে রাঙামাটি শহরে ঝুলিস্নক্যা পাহাড়ে নির্মাণাধীন সংযোগ সেতুর জোড়ায় এবং তিন তলাবিশিষ্ট মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে ও ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় বোতল পড়ে তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, ফজরের নামাজ আদায় করার সময় হঠাৎ মসজিদটি কেঁপে ওঠে। নামাজ শেষে বের হয়ে দেখা যায় মসজিদের দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।

একই সঙ্গে শহরের পুরানপাড়া ও ঝুলিস্নক্যা পাহাড়ের ওয়াই আকৃতির নির্মাণাধীন সেতুর দুই গার্ডারের সংযাগ স্থলে হালকা ফাটল দেখা গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. খোরশেদ আলম জানান, মসজিদ ও সেতু দুটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে। মসজিদটির দেওয়ালে ফাটল দেখার কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, নামাজ আদায়ে কোনো সমস্যা হবে না। যে ফাটল দেখা দিয়েছে তা সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে সেতুর দুই গার্ডারের অংশে এক্সপানশন জয়েন্ট রাখা হয়। এটি ফাটল না। এতে ঝুঁকির কোনো শঙ্কা নেই।

আতঙ্কে দুইতলা থেকে

লাফ চবি শিক্ষার্থীর

এদিকে সারাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে আবাসিক হলের দুইতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীর নাম হোসাইন আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

হোসাইন আহমেদ বলেন, 'হঠাৎ রুমের দেওয়াল, টেবিল নড়তে থাকলে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ায় আমি হলের দ্বিতীয়তলা থেকে লাফ দিই।'

স্নাতকোত্তরের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'সবচেয়ে পুরনো হলগুলোর একটিতে আমি থাকি। হলের বিভিন্ন কক্ষের পলেস্তরা খসে পড়ছে। মনে হচ্ছিল, ভূমিকম্পে হলটি ভেঙে পড়বে। এ কারণে আমি আতঙ্কিত ছিলাম। তাই লাফ দিয়েছি। কোমরে কিছুটা ব্যথা পেয়েছি।'

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে