শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার আসামি প্রায়ই পাকিস্তানে যাতায়াত করতেন। তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখা হচ্ছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

অবশেষে গ্রেপ্তার হলো যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত পলাতক আসামি কে এম আমিনুল হক। তিনি দীর্ঘদিন রজব আলী নামে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। প্রায়ই তিনি পাকিস্তানে যাতায়াত করতেন।

রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি আরও জানান, গত ২ জুন রাতের্ যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ওর্ যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি রজব আলী (৬৯) পরিচয়ে এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তার পিতার নাম মৃত কে এইচ এম এ গনি। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে।

র্

যাব কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর কে এম আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত শেষে অভিযোগ জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা।

আদালতে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রজব আলী সরাসরি বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামী ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় 'আলবদর' বাহিনী গঠন করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রামে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও নির্যাতন করেন। এ ছাড়াও স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন শেষে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

তিনি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে ৩টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলোতে তার ৪০ বছর সাজা হয়। রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করার পর তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

র্

যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আমিনুল হক ১৯৮২ সালে জেল থেকে বেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাতায়াত করতে থাকেন। এছাড়া তিনি মাঝে মধ্যেই পাকিস্তানে যেতেন। সেখানে তিনি দেড় থেকে দুই মাস করে অবস্থান করতেন। ১৯৯৭ সালে তিনি নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় আসেন। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে তার বিরুদ্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে নিজের নাম পরিবর্তন করেন। নিজেকে রজব আলী বলে পরিচয় দিতেন। তিনি ধানমন্ডি ও কলাবাগানে থাকতেন। বিদেশে থাকা তার দুই মেয়ের পাঠানো টাকায় তিনি ঢাকায় থাকতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন।

র্

যাব কর্মকর্তা বলেন, তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন 'আমি আলবদর বলছি' ও 'দুই পলাশী দুই মীরজাফর' নামে দু'টি বই প্রকাশ করার পর। ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত 'দুই পলাশী দুই মীরজাফর' বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশন করায় সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। বই দু'টিতে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে তিনি নিজেকে 'আলবদর কমান্ডার' দাবি করেন। ২০১৬ সালের ১৮ মে আদালত আমিনুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর আদালত তাকে মৃতু্যদন্ডের আদেশ দেন।

পাকিস্তান যাতায়াতের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না বা আন্তর্জাতিক কোনো নেটওয়ার্ক সৃষ্টি বা নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত কি না সে বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে বলের্ যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে