সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীতে দুই হাজার কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা

আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
  ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকরা এখন তরমুজের গাছ পরিচর্যা ও তরমুজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আর কৃষি বিভাগ বলছে, এবার অন্তত পটুয়াখালী জেলার যে পরিমাণ তরমুজ আবাদ হয়েছে তাতে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে। জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় সব থেকে বেশি তরমুজ অবাদ করা হয়েছে।

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে এক ফালি তরমুজ শীতল পরশ এনে দেয় প্রাণে। আর মুধুময় এই ফসলটি এখন কৃষকদের স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে। তাইতো এই জেলার কৃষকরা আগাম তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে তরমুজের বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে পটুয়াখালীতে তরমুজ বিক্রির জন্য বড় কোন পাইকারী বাজার না থাকায় অধিকাংশ কৃষক মাঠেই তরমুজ বিক্রি করেন। এ কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফরিয়ারাও সরাসরি কৃষকদের মাঠ থেকেও তরমুজ কিনে নিচ্ছেন। তবে কৃষকরা বলছেন, সার, বীজ ও কিটনাশকসহ সব কিছুর উচ্চ মূল্যের বাজারে তারা কাঙ্খিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বালিয়াতলী এলাকার তরমুজ চাষী শাহাবুদ্দিন মুনসী বলেন, 'আসলে তরমুজে লাভের টাকাটা ফরিয়ারাই খেয়ে ফেলে। আমাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকায় জমি থেকে কিনে তারা ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় নিয়ে সেই তরমুজ বিক্রি করে অন্তত ১০ লাখ টাকায়।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা খালি খাইট্টাই গেলাম। এই তিন মাস পর্যন্ত আমরা শ্রম দেতেছি এখন ফলন পাইতেছি। কিন্তু লাভ কি হবে ভালো দাম পাইতেছি না। আমরা খ্যাতে যেই তরমুজ বিশ-পঁচিশ টাকা কেজিতে বিক্রি করি তা তারা বাজারে নিয়ে ৪০ টাকা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করে। তরমুজের স্থায়ী কোন পাইকারী বাজার নাই। বাজার থাকলে হয়তো দাম দর করতে পারতাম।'

একই এলাকার কৃষক খাদিজা বেগম বলেন, 'আমি দুই লাখ টাকা লোন ছাড়াইছি এবং ১০ টাকা সুদে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়া দুই কানি ১০ কড়া জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। এখন যে জমিতে ঔষধ সার দিমু হেই টাহা ডা পর্যন্ত নাই। আইজ আবার ঋণ করতে লোক পাঠাইছি, এখন খুব সমস্যায় আছি। তরমুজ বিক্রি করে এই সব দেন পরিশোধ করমু। তয় আলস্নায় দেলে ফলন ভালোই হইছে। এহনও বিক্রি করা শুরু করি নাই।'

সাম্প্রতি পটুয়াখালীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সাইজ অনুযায়ী সাড়ে ৩শ' থেকে ৪শ' টাকায় প্রতিপিস তরমুজ কেনা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে এবার রমজানে তরমুজের ভালো চাহিদার পাশপাশি কৃষক দামও ভালো পাবেন।

পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান বছরে পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আগাম তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরেই যেহেতু রমজান শুরু হবে সেক্ষেত্রে তখন তরমুজের চাহিদাও অনেক বেশি থাকবে এবং কৃষক ভালো দাম পাবে। এবার আমরা আশা করছি এই জেলায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে। তবে কৃষকরা বাজার যাচাইবাছাই করে তরমুজ বিক্রি করলে ভালো দাম পাবেন। এ ছাড়া কৃষি পণ্য উৎপাদনের পাশপাশি কৃষি পন্যের বাজার সম্পর্কেও কৃষকদের ধারনা রাখতে হবে।'

তরমুজ আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়ে থাকে এ জন্য কৃষকদের সেচের সুবিধা নিশ্চিত করাসহ তরমুজের বীজের আমাদানি নির্ভরতা কমানোর পাশপাশি সার ও কিটনাশকের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হতে পারবে বলে মনে করেন কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে