সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে তিন সপ্তাহ ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম। যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছে না। বরং উপাচার্যঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর নেপথ্যে ভিন্ন উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত করছেন অভিযোগকারীরা।

যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কিছু ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণের পরিপত্র জারি করে। পরিপত্র অনুযায়ী, বিদু্যৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ৯ জুলাই এই নির্দেশনাকে সামনে রেখে যবিপ্রবি ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সব বিভাগের সব বর্ষের ক্লাস শ্রেণি কক্ষের পরিবর্তে অনলাইনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ জুলাই যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আনোয়ার হোসেন তার নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন।

কিন্তু সব ক্লাস অনলাইনে নেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন। সে সময় শিক্ষার্থীরা কৃচ্ছ্রতা সাধনের নির্দেশনা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব এসি, লিফট ও এসি বাস চলাচল বন্ধেরও দাবি তোলেন।

এরই মধ্যে ১৮ জুলাই যবিপ্রবি শিক্ষকরা অভিযোগ তোলেন, গত ১৬ জুলাই কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাদের গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও তারা সব ভবনের লিফট বন্ধ করে দেয়। ১৮ জুলাই তারা শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাড়ি বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি জরুরি সভা করে অপমান লাঞ্ছনার তদন্তক্রমে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগস্ট থেকে সব ক্লাস সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২ আগস্ট) ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যান। ফলে ক্লাসরুমে ক্লাস হওয়ার ঘোষণা এলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। প্রায় তিন সপ্তাহ ক্লাস না হওয়ায় তাদের মাঝে সেশন জটের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, 'অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণার পর শিক্ষকরা গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে ক্লাস বর্জন করেছেন। ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। তারা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন।'

সোহেল রানা আরও বলেন, 'শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাড়ির চাবি কারা কেড়ে নিয়েছে; তা জানেন না। অনলাইন ক্লাসের প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে তারা দেখা করে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবি জানাবেন।'

এদিকে, যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে, যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছে না। বরং উপাচার্যঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর নেপথ্যে ভিন্ন উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত করছেন অভিযোগকারীরা।

সূত্রের দাবি, অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল। এর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভও করেছেন। এর আগে যবিপ্রবির কয়েকটি ভবনে লিফট স্থাপনের দাবিতেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ওই সময় উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর আনোয়ার হোসেন ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে লিফট স্থাপনের আশ্বাস দেন। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সেই লিফট স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা লিফটের দাবিতে আন্দোলনে নামতে পারেন এই আশঙ্কায় ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে উপাচার্যঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা এই ক্লাসবর্জনের কর্মসূচি নিয়েছেন।

যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ মো. গালিব বলেন, 'কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাদের গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে শিক্ষকরা অপমানিত হয়েছেন। অপমান লাঞ্ছনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।' ওই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সুষ্ঠু বিচার হলে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাবেন।' লিফট বা অন্য কোনো বিষয় এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, এমন কোনো বিষয় তার জানা নেই।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানি ও বিদু্যৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের বৈঠকে ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু জ্বালানি ও বিদু্যৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিফট ও বাস বন্ধ করে দেন। যাতে শিক্ষকগণ অপমানিত হয়ে সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন।

চিকিৎসাজনিত কারণে দেশের বাইরে ছিলেন উলেস্নখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি ক্যাম্পাসে ফিরবেন। এরপর বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে