রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলায় গৃহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

বিচারকের কাছে দায় স্বীকার
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ঢাকার কলাবাগানে দশ বছর বয়সি শিশু গৃহকর্মী হত্যার দায় স্বীকার করেছেন গৃহিণী। বাসার খাবার চুরি করে খাওয়ায় শিশু গৃহকর্মীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন গৃহিণী। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গৃহিণী ডলি। আদালত ডলিকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। তিনি আরও জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে যশোর থেকে মামলার আসামির গৃহিণী মোছা. সাথী আক্তার পারভীন ওরফে ডলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ডলি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিসি বলেন, চলতি বছরের ২৬ আগস্ট কলাবাগান থানাধীন সেন্ট্রাল রোডের একটি বাসা থেকে হেনা নামে ১০ বছর বয়সি এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানা এলাকায়। শিশুটি এতিম। পরিবারের কেউ না থাকায় পুলিশ নিজ খরচায় হেনার লাশ দাফন করে।

ডিসি আরও বলেন, তিন বছর আগে হেনাকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছিলেন গ্রেপ্তার ডলি। ডলির বাচ্চার সঙ্গে খেলা করত হেনা। খেলার সময় ডলি তার বাচ্চার জন্য যে খাবার দিত তা থেকে কিছু খাবার নিয়ে খেয়ে ফেলত হেনা। এটিই হেনার বড় অপরাধ। এছাড়া ক্ষুধার যন্ত্রণায় মাঝে মধ্যেই হেনা বাসার খাবার চুরি করে খেত। আবার খেলাধুলা করার সময় স্বাভাবিক কারণেই দুই বাচ্চার মধ্যে মারামারি হতো। এসব বিষয় মেনে নিতে পারতেন না ডলি।

এজন্য প্রায়ই তিনি হেনাকে মারধর করতেন। এমনই ঘটনার জেরে গত ২৪ আগস্ট রাতে হেনাকে বেধড়ক মারধর করেন ডলি। এক পর্যায়ে রাগের মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করে হেনাকে। হত্যার পর লাশ বিছানার উপরে রেখে ঢেকে রাখে। পরদিন সকালে পালিয়ে যান ডলি। শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় ডলিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলতে থাকে। গ্রেপ্তার এড়াতে ডলি নিজের কাছে কোনো ফোন রাখতেন না। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তাকে হেঁটে চলতে দেখা যেত। এভাবে ঢাকার তিন শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ফুটেজে দেখা গেছে তিনি দোকান থেকে মোবাইল নিয়ে বা কারো কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে মোবাইল করতেন। হাঁটার পাশাপাশি তাকে রিকশায়ও যাতায়াত করতে দেখা গেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। শেষ পর্যন্ত যশোরের কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহায়তায় ডলিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

ডিসি জানান, হেনার সারা শরীরে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। হেনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা, পোড়া ও রক্তাক্ত জখম রয়েছে। হেনাকে কোনো সময়ই তার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে দিত না। ঘটনার দিন ডলি মুখ চেপে ধরে হেনাকে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে শ্বাসরোধে হেনার মৃতু্য হয়। মৃতু্যর সময় হেনা বাঁচার অনেক চেষ্টাও করেছে বলে ডলি স্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তিসহ রমনা জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, গ্রেপ্তার গৃহিণী ডলি শিশু গৃহকর্মী হেনাকে হত্যার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে