সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কম মূল্যেও শেয়ার কেনায় অনাগ্রহী পরিচালকরা

কঠোর হচ্ছে বিএসইসি
এম সাইফুল
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও মানছে না অনেক কোম্পানি। এমনকি বর্তমানে কম মূল্যে শেয়ার কেনার সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাচ্ছে না মালিকপক্ষ। তাই এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

জানা গেছে, নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

বিএসইসির একটি সূত্র বলছে, কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয় না করলে বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি কোনো পরিচালকের এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ার না থাকলে তাকে পদচু্যত করা হতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে সর্বনিম্ন দরে শেয়ার কিনতে পারবেন পরিচালকরা। অথচ এই সুযোগটি তারা নিচ্ছে না। তারা কম দরে শেয়ার কিনলে একদিকে বাজারে গতিশীলতা আসবে, অন্যদিকে পরিচালকদের শর্তও পূরণ হয়ে যাবে।

এদিকে কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যেই বিএসইসি স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কাছে জারি করা এক নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরও বলেছে, ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে কোম্পানিগুলোতে কমপক্ষে দুইজন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ করতে হবে।

বিএসইসি বলছে, ৩১ মে ২০২৩ পর্যন্ত ২৯টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ মানেনি। তবে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন করেছে।

বিএসইসির সূত্র অনুযায়ী, ৯টি কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের শেয়ার ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে এবং ১০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে ৩টি কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ৫টি কোম্পানি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, যা কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। আর ৪টি কোম্পানি এক বছর ধরে তাদের শেয়ার ধারণ রিপোর্ট কমিশনে জমা দেয়নি। কোম্পানিগুলো 'জেড' ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।

২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০১১ সালে এই নিয়ম জারি করে। এর মাধ্যমে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের দায়িত্বশীল করাই উদ্দেশ্য। পুঁজিবাজারে পতনের আগে অনেক পরিচালক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

২০২০ সালের জুলাইয়ে বিএসইসির নতুন নেতৃত্ব ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ৬০ দিনের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের যৌথভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে নূ্যনতম ২ শতাংশ করে শেয়ারধারণের নির্দেশ দেয়। দফায় দফায় সুযোগ বাড়ালেও ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানি শুধু এই নির্দেশনা পরিপালন করে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে শেয়ার সংখ্যা ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- একটিভ ফাইন ১২ শতাংশ, আলহাজ টেক্সটাইল ২৫.৬৩ শতাংশ, এপোলো ইস্পাত ২০.২৪ শতাংশ, আজিজ পাইপস ১৩.১১ শতাংশ, ডেল্টা স্পিনার্স ২০.৫৭ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুড ৭.৮৫ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সট ১৬.২৬ শতাংশ, ফার্মা এইড ২৩.৫৯ শতাংশ, সালভো কেমিক্যাল ২৫.১৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ২৫.৮৯ শতাংশ, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলস ২২.১৪ শতাংশ, ফ্যামিলিটেক্স ৪ শতাংশ, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ১৩.২০ শতাংশ, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ১৭.২০ শতাংশ, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ২৫.৮১ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ১২ শতাংশ এবং নর্দান জুট ১৫.০৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার যদি উদ্যোক্তা এবং পরিচালকেরা কেনেন বা তাদের হাতে থাকে, তাহলে এটি বড় একটি তারল্য বাজারে আসবে। এটি পুঁজিবাজারে চলমান তারল্য সংকট কমাতে সহায়তা করতে পারে। এ বিষয়ে বিএসইসির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, 'সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ম মানতে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব কোম্পানিগুলোকে আবারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।'

মুখপাত্র আরও বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের পর যেসব কোম্পানি নিয়ম মানতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে বিএসইসি। এর আগে জুলাই ২০২০ সালে ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বিএসইসি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে