সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা -যাযাদি

বছর ঘুরে আবারও ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মেতে উঠল মাঝিদের বৈঠা। তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণের উচ্ছ্বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। প্রতিযোগিতার দিন সকাল থেকেই তিতাস পাড়ে ভিড় করেন হাজারও দর্শক।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে তিতাসের শিমরাইলকান্দি গাঁওগেরাম পয়েন্টে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। প্রতিযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার ১৫টি নৌকা অংশ নেয়। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৪টি (ভাড়াকৃত), বিজয়নগর উপজেলার ৫টি, সরাইল উপজেলার ১টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ২টি (ভাড়াকৃত), নবীনগর উপজেলার ২টি (ভাড়াকৃত) ও নাসিরনগর উপজেলার ১টি নৌকা (ভাড়াকৃত)।

নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকে শহরে মানুষের ঢল নামে। শিমরাইলকান্দি থেকে মেড্ডা পর্যন্ত তিতাস নদীর তীরে জনস্রোতে পরিণত হয়। নদীর পাড় ছাড়াও মানুষ নদীর পাড়ের বহুতল ভবনের ছাদে উঠে, শেখ হাসিনা সড়কের ব্রিজে উঠে নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। অনেকে নৌকাবাইচ উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।

এদিকে নৌকাবাইচ উপলক্ষে প্রতিযোগিতাস্থলে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও নৌ-পুলিশের কয়েকটি টিম নিয়োজিত থাকে। এছাড়াও ছিল ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম। পাশাপাশি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ৮টি টিম কাজ করে।

বিকাল ৫টায় মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্টে তিতাস নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, 'যতদিন বাঙালি ও বাংলা সংস্কৃতি থাকবে ততদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হবে। তিতাস পাড়ে আজ (বৃহস্পতিবার) হাজার হাজার মানুষ। এতেই বোঝা যায় মানুষ নৌকাবাইচকে কত ভালোবাসে।'

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, 'মহামারি করোনার কারণে দুই বছর নৌকাবাইচ বন্ধ ছিল। করোনার পর ২০২২ সালে আবার নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। আগামীতেও এই নৌকাবাইচ অব্যাহত থাকবে।'

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মেয়র নায়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উলস্নাহ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রথমস্থান অর্জনকারী নবীনগর উপজেলার নৌকার মালিককে পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী সরাইল উপজেলার নৌকা মালিককে ৫০ হাজার ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী সদর উপজেলার নৌকার মালিকের হাতে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি। এছাড়া বাইচে অংশ নেওয়া প্রতিটি নৌকার মালিককে ২৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে