রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি বাড়াবে পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্র

ব্যয়বহুল হলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর এ প্রকল্প থেকে বিদু্যৎ পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে এই কেন্দ্র চালু হলে মোট জিডিপিতে অন্তত ২ শতাংশ অবদান রাখবে
রেজা মাহমুদ
  ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ইউরেনিয়ামের সরবরাহ পেয়েছে রূপপুর বিদু্যৎ কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার এই পারমাণবিক জ্বালানি আনুষ্ঠানিকভাবে রূপপুর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে রাশিয়ার রোসাটম কোম্পানি। দেশে প্রচলিত যে কোনো জ্বালানির থেকে এর বিদু্যৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। ফলে এই বিদু্যৎ দেশের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জ্বালানি এলেও কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। আর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারে ২০২৫ সাল নাগাদ। বিদু্যৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যয়বহুল হলেও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর এ প্রকল্প থেকে বিদু্যৎ পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে এই কেন্দ্র চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তত ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করছে তারা। যা দেশের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সরকারি ৬৮টি ও বেসরকারি ২৯টি মোট ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৩৬টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫টি রয়েছে। সবচেয়ে কম অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে রাজশাহী ৮, খুলনা ৮, রংপুর ৪ ও বরিশাল বিভাগে ৩টি। মূলত জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় এসব এলাকার অর্থনৈতিক জোনগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। তবে রূপুপুর বিদু্যৎ কেন্দ্র চালু হলে এসব ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তারা।

বেজার তথ্যমতে এই বিদু্যৎ কেন্দ্র চালু হলে উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খাসবড়শিমুল, পঞ্চসোনা, চকবয়রা এবং বেলকুচি উপজেলার বেলছুটি ও বড়বেরা খারুয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম এই ইকোনমিক জোনের আয়তন ১০.৩৫৯৩ একর। বিদু্যৎসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পর্যাক্রমে ৭০০টির মতো ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তা হলে মাসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী উৎপাদন সম্ভব।

রূপপুর বিদু্যৎ কেন্দ্রের সর্বশেষ অবস্থা

রূপপুর কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দু'টি ইউনিট রয়েছে। প্রথম ইউনিটের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তিনি জানান, আগামী এপ্রিলের মধ্যে প্রথম ইউনিট জ্বালানি স্থাপনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলে ইউরেনিয়াম ফুয়েল স্থাপন করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। প্রথম ধাপে ২০ শতাংশ বিদু্যৎ উৎপাদন হবে।

প্রথম ধাপের সফলতার পর ধাপে ধাপে ৫০ ও ৭০ শতাংশ এবং শেষ ধাপে পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে। এই ধাপগুলো পার হতে সাধারণত ১০ মাস সময় লাগে। ২০২৫ সালের শুরুতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, 'এ প্রকল্পের জন্য সাত বছর নিরলসভাবে কাজ করা হয়েছে। করোনার সময়ও কাজ ব্যাহত হয়নি। বিশ্বে আর কোথাও সাত-আট বছরে পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণের রেকর্ড নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'এ প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা উত্তরবঙ্গের মানুষের সুবিধা যেন নিশ্চিত হয়। আমরা সেদিকে নজর রাখছি'।

এর আগে ২০০৯ সালের ১৩ মে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রাশান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশনের (রোসাটম) মধ্যে 'পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার' বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ এবং রাশিয়া সরকারের মধ্যে বিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপন-সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চুক্তি (আইজিএ) স্বাক্ষরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের স্থাপনার কাজ শুরু হয় এবং ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ও ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুলিস্নপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে