সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিম-সবজিতে দাম কমলেও উত্তাপ আমদানি পণ্যে

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে চড়া দাম অব্যাহত রয়েছে সব ধরনের আমদানি পণ্যে। ডিম ও শীতের সবজির কিছুটা কমলেও বাড়তিই রয়েছে আলু-পেঁয়াজ, চাল, চিনি, আটা ও ময়দার দাম। এছাড়াও নতুন করে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। শুক্রবার রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা আটার কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার ওপরে। অর্থাৎ দু-সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটা কেজি প্রতি ১০ টাকা এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ টাকা। একইভাবে প্রায় ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে এদিন প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হয়েছে ৬৮-৭০ টাকা দরে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে খোলা আটা কেজিতে সাড়ে তিন এবং প্যাকেট আটার দাম ১৪ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ৯ শতাংশ।

এছাড়া বাজারভেদে বেড়েছে মশুর ডালের দামও। চলতি মাসের শুরুতে সরু দানার মসুর ডালের কেজি ১২০ টাকা এবং বড় দানার ডাল

প্রতি কেজি ১শ' টাকার নিচে বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ ও ১২০ টাকা দরে। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা এবং দু-সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা।

এছাড়াও বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে চিনিসহ অন্যান্য আমদানি পণ্যে। ২ নভেম্বর চিনির শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হলেও এদিন বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকার ওপরে। যা এ মাসের শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকার মধ্যে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অক্টোবরের শেষ থেকে হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের আমদানি পণ্যের দাম চড়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, প্রতি ডলারে ১১১ টাকা করে এলসি খোলার কথা থাকলেও গত ৩ সপ্তাহ

ধরে ১২৫ থেকে ১২৮ টাকায় এলসি খুলতে হচ্ছে। ফলে সরকারি দামের সঙ্গে আমদানি মূল্যের বড় পার্থক্য দেখা দিয়েছে। তবে বাড়তি দরে এলসি খোলা পণ্য দেশে আসবে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে। তখন বাজার আরও চড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া ব্যাংকগুলোতে ডলার না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে

\হপারছেন না ব্যবসায়ীরা। এমনকি দেশের বড় বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে। একই কারণে গত সপ্তাহে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণে সরকারকে চিঠি দিয়েছে আমদানিকারকরা। তবে বাজারে এখন ভোজ্যতেলে আগের দামই কার্যকর রয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকরা বলছেন, নতুন দরে এলসি করা ভোজ্যতেল দেশের বাজারে আসতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে, সে হিসেবে এলসির পেমেন্ট হবে। কিন্তু তখন ডলার রেট আরও বেড়ে গেলে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দাম সমন্বয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাজার পর্যালোচনা করে আগামী মাসের নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সে হিসাবে ডলারের দাম না কমলে ডিসেম্বরের শুরুতেই বাড়তে পারে ভোজ্যতেলের দাম।

এদিকে রাজধানীর বাজারে এ সপ্তাহে চালের বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের চালের কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছিল। অর্থাৎ দু-সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মোটা চালের কেজিতে ৫ এবং চিকন চালের কেজি বেড়েছে ৩ টাকা পর্যন্ত। এদিন মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা এবং ২৮ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে। অন্যদিকে মানভেদে প্রতি মিনিকেটে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৮ টাকা দরে।

এছাড়া বাজারে যথারীতি উচ্চমূল্য অব্যাহত রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের দামে। এদিনও আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার ওপরে। এ মাসের শুরুতে আমদানির খবরে বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকা বিক্রি হলেও তা ফের বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে গত সপ্তাহে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১শ' এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে। যা এ সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে।

তবে বাজারে কমতির দিকে রয়েছে ডিমের দাম। এদিন বাজারগুলোতে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৮ টাকা দরে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের থেকে প্রতি ডিমে কমেছে দেড় থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও কমেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০ ও সোনালি ৩১০ টাকা দরে। এছাড়াও কিছুটা কমেছে সবজির দাম। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন বেশিরভাগ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। তবে সে অনুপাতে দাম কমেনি শীতের সবজির; কিন্তু সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধের কারণে সবজি পরিবহণ কমেছে। যদি পণ্য পরিবহণ স্বাভাবিক থাকে তাহলে দাম আরও কমবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বাজারে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। এদিন ৪শ' গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ৭শ' টাকা, আর ৭শ' থেকে ৮শ' গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯শ' টাকা দরে। এছাড়া মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ' টাকা, বড় পাঙাশ ২শ' টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ' টাকা ও শিং মাছ ৬শ' টাকা, শোল মাছ ৮শ' টাকা, পাবদা ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা অন্যান্যের মধ্যে ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬শ' থেকে ৭ শ' টাকা, মলা মাছ ৫শ' টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ' টাকা, মাঝারি আকারের বোয়াল ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, গুঁড়া মাছ ৩শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৭শ' এবং বাগদা ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ' টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে