শিগগিরই ঘোষণা করা হবে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের নতুন কমিটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে অসংখ্য পদপ্রত্যাশীরা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন শীর্ষ দুই পদের জন্য। সম্প্রতি তাদের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করা হয়। এসব পদপ্রত্যাশীদের বাছাই করে শিগগিরই চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে নাম ঘোষণা করবে কেন্দ্র।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে শীর্ষ দুই পদের জন্য আগ্রহী নেতাদের জীবন বৃত্তান্ত যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমাদানের নির্দেশ দেন। তারই আলোকে গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারির পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে আগ্রহী প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বৃত্তান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর এবং দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ওই জেলাসমূহে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে আগ্রহী প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বৃত্তান্ত (২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের ভূমিকা সম্পর্কিত তথ্য উলেস্নখপূর্বক পিডিএফ ফাইল আকারে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের এ ঘোষণার পর যুবদলের দুই শীর্ষ পদের জন্য গত ১৪-১৬ জানুয়ারি অসংখ্য যুবদল নেতা তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। জীবন বৃত্তান্ত গ্রহণের পর ১৭ ফেব্রম্নয়ারি গ্রহণ করা হয় তাদের সাক্ষাৎকার।
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। চলছে ঢাকায় তদবির। নিজেরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। যেসব জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতার অনুসারী হিসেবে পদপ্রত্যাশীরা রাজনীতি করেন, তাদেরও কাজে লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিন সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করলেও উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের কমিটি এখনো বহাল আছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় যুবদল সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনের বিষয়ে তারা এবার বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। শুধু বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সুপারিশ কিংবা পদপ্রত্যাশীদের তদবিরের ওপর তারা নির্ভর করছেন না। নিজস্ব লোক দিয়ে মাঠপর্যায়েও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এ ছাড়া ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাটে যাদের নাম এসেছে, পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তা 'মাইনাস পয়েন্ট' হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় যুবদল সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনের বিষয়ে তারা এবার বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। শুধু বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সুপারিশ কিংবা পদপ্রত্যাশীদের তদবিরের ওপর তারা নির্ভর করছেন না। নিজস্ব লোক দিয়ে মাঠপর্যায়েও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এ ছাড়া ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাটে যাদের নাম এসেছে, পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তা 'মাইনাস পয়েন্ট' হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের কমিটি হয় ২০১৭ সালে। ২০১ সদস্যবিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদি কমিটির সভাপতি রাউজানের হাসান মোহাম্মদ জসিম এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন রাঙ্গুনিয়ার মুরাদ চৌধুরী। তারা দুজনেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি ইউসুফ চৌধুরীও সভাপতি পদপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আফছার ভুঁইয়া জুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক মইনুল আলম জনি, উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা, সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মোস্তাফা এবং সহসাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন নুরু সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সব উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সবাইকে সাথে নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছি। কঠিন সময়েও মাঠে ময়দানে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ছিলাম। সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। দল যদি এবারও দায়িত্ব দেয় তা আন্তরিকভাবে পালন করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আবারও পেতে চান চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ। যুবদলের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি জানান তারা।
এ ছাড়া এসব পদের জন্য তৎপরতা দেখাচ্ছেন নগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী সিরাজ উলস্নাহ, যুবদল নেতা ইকবাল হোসেন, নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির তৃতীয় সহসভাপতি সাহেদ আকবর। তিনি নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক সুমন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, সাবেক নগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মাইনুদ্দীন শহীদ, মোশাররফ হোসেন, এনামুল হক রাজুসহ বেশ কয়েকজনের নাম প্রচার আছে।
মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহেদ জানান, সারা দেশেই কমিটি দেবে। আমাদের ডেকে কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দিয়েছে, কমিটি প্রক্রিয়াধীন। সভাপতির পদ পেলে নগর যুবদলকে আর সুন্দরভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের কমিটিতে স্থান পেতে চলছে একই ধরনের প্রচেষ্টা। জেলা যুবদল সভাপতি মো. আজগর, মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. মহসিন, বাঁশখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবু আহমেদ, জেলা যুবদলের সহসভাপিত মো. শাহাজাহান চৌধুরী ও সহসম্পাদক আব্বাস উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন পদ পেতে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে মো. আজগর জানান, তিন বছরের কমিটি এখন সাড়ে ৬ বছর হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ফ্যাসিবাদী সরকারের মামলা-হামলা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কেন্দ্র যে দায়িত্ব দেবে বিগত সময়ের মতো আন্তরিকভাবে তা পালন করবো।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না জানান, চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলা কমিটির বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। দলের জন্য ত্যাগী এবং সুনামের সঙ্গে রাজনীতি করছেন তাদেরই বেছে নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল বলেন, 'শিগগিরই চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে কেন্দ্র। ১৪-১৬ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী জীবন বৃত্তান্ত গ্রহণের পর ১৭ ফেব্রম্নয়ারি তাদের সাক্ষাৎকার শেষে শুরু হয়েছে কমিটি ঘোষণার পরবর্তী কার্যক্রম।'