শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেস-বাসা নিয়ে অনিশ্চয়তায় জবি শিক্ষার্থীরা

আবাসনের অপ্রতুলতা এবং অতিরিক্ত বাসা ভাড়াসহ বেশ কয়েকটি জটিলতার ফলে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখনো শঙ্কায় রয়েছেন
জবি প্রতিনিধি
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

করোনার সংক্রমণে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই ধারাবাহিকতায় বন্ধ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও মুখরিত হয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে আটকে থাকা সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্তে ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জবি শিক্ষার্থীরাও। তবে দীর্ঘ বিরতিতে মেস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করায় এখন আবার আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী থাকেন। তবে বর্তমানে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী মেস-বাসা খোঁজ করায় পরীক্ষার আগে আবাসন নিশ্চিত করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢাকায় এসে পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আবাসন নিশ্চিত করার জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রাম থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রম্নপে পোস্ট, আত্মীয়স্বজন ও সহপাঠীদের মাধ্যমে বাসার খোঁজ নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে আবাসন নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে আবাসনের অপ্রতুলতা এবং অতিরিক্ত বাসা ভাড়াসহ বেশ কয়েকটি জটিলতার ফলে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখনো শঙ্কায় রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি ইতঃপূর্বে কয়েকবার সশরীরে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তখন গ্রাম থেকে অনেকেই মেস ঠিক করে ঢাকায় আসে। তবে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় মেস ছেড়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে আর্থিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত জুনের শেষ দিকে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘোষণাকে ঘিরে গ্রামে থাকা অনেক শিক্ষার্থীই ঢাকায় মেস ঠিক করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা না হওয়ায় মেস ছেড়ে আবারও বাড়িতে চলে যায় শিক্ষার্থীরা। এরপর আবারও আগস্টের ১০ তারিখ থেকে সশরীরের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পুনরায় মেস খোঁজেন শিক্ষার্থীরা। তবে দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বাড়ায় তাও স্থগিত করা হয়।

আগামী ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত ও স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর জবি শিক্ষার্থীরাও পুনরায় মেস-বাসা ঠিক করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকে ৭-১০ দিন ধরে চেষ্টা করেও মেস-বাসা না পেয়ে বিকল্প হিসেবে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই একমাত্র ভরসা মেস-বাসা। অনেকে আবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি টাকা দিয়েই রুম নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এক্ষেত্রে ছাত্রীদের অবস্থা বেশি করুণ। তাদের দাবি ছাত্রী হলে থেকে পরীক্ষা দিতে পারলে আবাসনের জন্য মানসিক চাপ থাকত না। পরীক্ষার আগেই মেস নিশ্চিত করে ঢাকায় যাওয়া এ মুহূর্তে বেশ কষ্টসাধ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা পুরোপুরি সমাধান না করা গেলেও সুস্পষ্টভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা জানালে তা সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী চন্দ্রিমা রায় বলেন, ১৫ দিন ধরে মেস খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ঢাকা থেকে অনেক দূরে বাসা হওয়ায় চটজলদি গিয়ে মেস পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সবাই একসঙ্গে বাসা খোঁজায় বাসা পাওয়া দুর্লভ হয়ে গেছে। এদিকে এখনো আমরা মিডটার্ম দিচ্ছি আবার ফাইনাল পরীক্ষার টেনশন সব মিলিয়ে বাসা খুঁজে বের করার বিষয়টি অনেক ভোগাচ্ছে আমাদের। এক্ষেত্রে হলে যদি আগেই উঠানো হতো তাহলে মেসও ফাঁকা হতো।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অঙ্কুর মন্ডল বলেন, আগেও কয়েকবার পরীক্ষার ডেট দিয়েছিল। তাই আমরা বাসা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আমাদের বাসায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। ফলে আমাদের গুনতে হয়েছে বাড়তি মেস ভাড়া। এখন পরীক্ষা চূড়ান্ত। তাই সবাইকে বাড়ি থেকেই মেস খুঁজতে হচ্ছে। তবে মেস পাওয়া যাচ্ছে না।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুরভী বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমি বাসা খুঁজছি। তবে পাচ্ছি না। বাসা না পেলে আমাদের ভোগান্তি বেশি হবে। ছাত্রীহলে পরীক্ষার আগে উঠানো হলে সার্বিকভাবে ভালো হতো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, মেস বা বাসা ভাড়া করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের না। তবে তারপরও কোনো শিক্ষার্থী সুস্পষ্টভাবে তার সমস্যার বিষয়টি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কি সাহায্য চায় সেটির আবেদন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে দিতে পারে। তখন আমরা এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেব। এক্ষেত্রে ছাত্রকল্যাণ শুধু মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. প্রতিভা রাণী কর্মকার বলেন, দ্রম্নতই ছাত্রীদের হলে উঠানো হবে। কোভিড-১৯ ও বেশ কয়েকটি কারণে ছাত্রীহলটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। অর্ডিনেন্স অনুসারে ছাত্রীরা সিট পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে