শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী লুনার মুখ তুলে তাকানোর গল্প

ক্রীড়া ডেস্ক
  ২৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
লুনা সলোমন

একটু ভালো করে বাঁচার স্বপ্ন, আরেকটু স্বাধীনতা পাওয়ার আশা মেয়েটিকে জুগিয়েছিল অনেকটা পথ পেরুনোর শক্তি। ইউরোপের রঙিন জীবনের হাতছানিতে আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ইরিত্রিয়া থেকে পালিয়ে এক সময় পৌঁছলেন সুইজারল্যান্ডে। কিন্তু গায়ে সেঁটে ছিল যে 'শরণার্থী' তকমা। মনটা তাই ছোট হয়ে থাকত সারাক্ষণ। কারও দিকে মুখ তুলে তাকানোর সাহসটুকু হতো না। সেই লুনা সলোমন এখন টোকিও অলিম্পিকসের অংশ। অলিম্পিয়ান হতে পারার ঈর্ষণীয় গর্ব তার সঙ্গী!

আসাকা শুটিং রেঞ্জে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইয়ে গত শনিবার হন ৫০তম। বলার অপেক্ষা রাখে না, ছিটকে গেছেন বাছাই থেকে। কিন্তু শত বাধা পেরিয়ে যে জীবন গড়েছেন, তা থেকে তো আর ছিটকে যাননি লুনা। সব ভয়, শঙ্কা, পিছুটান কাটিয়ে মুখ তুলে তাকানোর সাহসটুকু অর্জন করেছেন ঠিকই।

লুনার এই গল্পের আরেক নায়ক অলিম্পিকের চ্যাম্পিয়ন শুটার নিক্কোলো কামপিরিয়ানি। ২০১৫ সালে সুইজারল্যান্ডে আসা লুনার মধ্যে লুকায়িত প্রতিভাকে খুঁজে বের করেন তিনি। অলিম্পিক চ্যানেল অরিজিনাল সিরিজ 'টেকিং রিফিউজি'-এর মাধ্যমে তাকে শুটিংয়ে আনেন অলিম্পিকে তিন সোনাজয়ী নিক্কোলো। অথচ এর কিছুদিন আগেও শুটিং বলে কোনো খেলা আছে, তা জানতেনই না লুনা! ২০১৬ সালে রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকের পর শুটিংকে বিদায় বলে দেন নিক্কোলো। সুইজারল্যান্ডে থিতু হয়ে তিনি বেছে নেন নতুন পথ। লুজানে থাকা শরণার্থীদের মধ্য থেকে সম্ভাবনাময় শুটারদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়েন কাজে, যাতে করে টোকিওর আসরে খেলার 'বাছাইয়ে নূ্যনতম স্কোর' করতে পারেন শুটাররা। লুনা তাদেরই একজন।

শুটিংয়ে আসার পর থেকে লুনার ভেতরটা বদলে যেতে থাকে। মনের যে কুঠুরিতে শঙ্কা-ভয় বাসা বেঁধেছিল, একটু একটু করে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিতে থাকে সেখানে। অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে সপ্তাহে চারদিন অনুশীলন করতে করতে নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করতে থাকেন লুনাও। অনুভব করতে থাকেন, বদলে যাচ্ছেন তিনি, 'শুটিংয়ে যোগ দেওয়ার পরই আমি মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলার আত্মবিশ্বাস পেলাম। আগে কখনো যা করতে পারতাম না আমি। মাথা নিচু রাখতেই অভ্যস্ত ছিলাম; কেননা, আমি ছিলাম শরণার্থী। খেলাধুলার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এখন লুনা অন্য সবার মতোই। তার কোনো ঘাটতির জায়গা নেই, খেলাধুলায় এসে আমি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। হঁ্যা, এই আত্মবিশ্বাসই বিশেষ কিছু।'

বয়স ২৭ বছর। সন্তান আছে। শুটিং রেঞ্জে নামার আগে অলিম্পিক ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় লুনা পিছু ফিরে তাকালেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দিনগুলোর দিকে। আশাবাদ জানালেন, ভবিষ্যতে প্রিয় ইরিত্রিয়ার আঙিনায় ফেরারও। তিনি বলেন, 'জীবনে কখনো কখনো আপনি পথ বেছে নিতে পারবেন, কখনো পারবেন না। (আমি পেরেছিলাম) যদিও আমরা চেয়েছিলাম, জন্মভূমিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে, কিন্তু পরিস্থিতি নিরাপদ ছিল না। তাই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি ছিলাম ভীষণ হতাশ এবং দুঃখী মেয়ে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে