শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারিতে প্রান্তিক পরিবারের ঋণ বেড়েছে : জরিপ

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। খাদ্য ও খাদ্য-বহির্ভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে বলে অতিমারীর প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্ম ফেব্রম্নয়ারি মাসে এ জরিপ পরিচালনা করে। বৃহস্পতিবার 'কীভাবে অতিমারীকে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী : একটি খানা জরিপের ফলাফল' শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপন করেন জরিপের প্রধান গবেষক বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইশতিয়াক বারী।

কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক ও জীবনধারণের উপর প্রভাব নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

সারা দেশের এক হাজার ৬০০ খানায় সরাসরি পরিচালিত এ জরিপে কোভিড ১৯বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাবও দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।

এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ পরিবার সরকারের বিনামূল্যের ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ করোনাভাইরাস নিয়ে খুব বেশি ভোগেননি বলে জরিপের উপাত্ত তুলে ধরেন গবেষক ইশতিয়াক।

জরিপে দেশের চর, হাওড় ও উপকূলীয় এলাকার ১০০ করে ও বস্তির ৪০০ পরিববার এবং ৩০০ আদিবাসী পরিবারের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

এই গবেষণার ওপর মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'অতিমারী চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সহযোগিতা আরও বহুগুণ বাড়ানো উচিত।'

তিনি বলেন, 'এই অতিমারী সংকটাপন্ন মানুষকে আরও বিপন্ন করেছে। তাদের এই সমস্যা বহুমাত্রিক। একদিকে তাদের আয় কমে গেছে, খাদ্য সংকটে পড়েছে, আবার ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।'

মহামারি মোকাবিলায় আগামী বাজেটে 'সংহতি তহবিল' গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই তহবিল থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে প্রান্তিক মানুষের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিকুজর রহমান সংহতি তহবিল গঠনকে যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে উলেস্নখ করে এটি সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনার কাঠামো গঠনের কথা বলেন। তিনি আগামী বাজেটে এজন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জরিপের প্রধান গবেষক ইশতিয়াক বলেন, জরিপকালে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সময়কার কষ্টের মধ্যে টিকে থাকতে প্রথমে খাদ্য বাছাইয়ে সামঞ্জস্য আনার অর্থাৎ সুষম খাবার বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য কেনা বাদ দিয়েছেন। এরপরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার বলেছেন তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'মহামারির মধ্যে তারা চলমান আয় দিয়ে চলতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে উপকূলীয় এলাকার ৮৬ শতাংশ, বস্তিবাসীর ৮৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন'।

গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি আরও জানান, অতিমারীর সময়কালে পরিবারগুলোর মধ্যে ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় কমিয়েছে। খাদ্য-বহির্ভূত ব্যয় কমিয়েছেন ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সরকারি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙেছে বলে উলেস্নখ করে।

অন্যদিকে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার আর্থিক অনটনে পড়ে গবাদিপশু বিক্রি করেছে। ২ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার জমি বা স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে অর্থের সংস্থান করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে