রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আমদানি এলসি খোলা হয়েছে আগস্টে

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চলমান ডলার সংকটের কারণে নিষ্পত্তি কমে গেলেও গত পাঁচ মাসের মধ্যে আগস্টে আমদানি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার হার ছিল সর্বোচ্চ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ৫.৫৯ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে।

মার্চ মাস থেকে এলসি খোলার পরিমাণ কমছে। মার্চে ৫.৭৯ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়, জুনে খোলা হয় ৪.২৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি; যা তিন বছরের সর্বনিম্ন। কিন্তু নতুন অর্থবছরে আমদানি বাড়তে শুরু করেছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, 'বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং রপ্তানি পণ্যের এলসি আগস্টে খোলা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি এলসি খুলছেন। উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের কাঁচামালের প্রয়োজন। উৎপাদন না হলে তারা ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন না।'

ডলারের তারল্য পরিস্থিতির কারণে এলসি খোলার প্রবণতা বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না...তারল্য পরিস্থিতি আগের মাসগুলোর মতোই আছে। আমরা এক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতি দেখিনি। যেসব এলসি খোলা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ডিফার্ড এলসি। অর্থাৎ আমরা এখন ঋণে পণ্য আমদানি করছি, পরে মূল্য পরিশোধ করব।'

অর্থনীতিকে সচল রাখতে এলসি খোলার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে বলে যোগ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার।

তবে প্রান্তিক হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে আগস্ট মাসে এলসি খোলার হার ১৪% কমেছে। ২০২২ সালের আগস্টে ৬.৫২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।

কেন বছরের পর বছর এলসি খোলার হার কমেছে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের আমদানি এলসি পর্যবেক্ষণ করছে। এই নজরদারির কারণে ওভার ইনভয়েসিং কমেছে, যাতে সামগ্রিকভাবে এলসি খোলা হয়েছে কম।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'আগের তুলনায় আমরা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। আমরা এক্ষেত্রে সতর্ক এবং কেবলমাত্র প্রয়োজন হলেই এলসি খুলি।'

এর একটি কারণ হিসেবে তিনি এলসি খোলার সময় পেমেন্টের শিডিউল নির্ধারণের নিয়মকে দায়ী করেন। 'আমাদের ডলার ফ্লো অতটা বেশি নয়। সামগ্রিকভাবেই এলসি খোলার পরিমাণ কমছে,' বলেন তিনি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিলাসবহুল দ্রব্যের জন্য এলসি খোলার হার কমানোর বিষয় উলেস্নখ করেছেন।

এদিকে, আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তিও প্রান্তিক হিসাবে আগস্টে ৩৫%-এর বেশি কমেছে। গত বছরের আগস্টে ৭.৬৯ বিলিয়ন ডলার এলসি পেমেন্ট করা হয়, এ বছরের একই মাসে তা ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। জুলাইতে এলসি পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান ব্যাখ্যা বলেন, এলসি খোলার পরিমাণ কমলে স্বাভাবিকভাবেই নিষ্পত্তি কম হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের মধ্যে অর্থপ্রদান বৃদ্ধিতে যে বাধা রয়েছে- সেটিকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করেন তিনি।

ইনকামিং ডলারের প্রবাহ বাড়াতে ডলারের জন্য একটি বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তিনি পরামর্শ দেন, বাজার-ভিত্তিক হার প্রাথমিকভাবে ১২০-১৩০ টাকা হতে পারে এবং শেষমেশ এটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাবে। এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি দুটি বিষয়কেই প্রভাবিত করছে ডলারের নন-মার্কেট রেট।

অপর একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এলসি খোলায় বিধিনিষেধের কারণে পেমেন্ট কমে গেছে। ফলে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। তবুও, আগস্টে রেমিট্যান্স ২১% কমে যাওয়ায় দেশে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বেশ বড় ব্যবধান রয়েছে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রিজার্ভ থেকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। চলমান ডলার সংকট নিরসনে এসব পদক্ষেপ কার্যতই যথেষ্ট নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে