রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের আগে ইতিবাচক শেয়ারবাজার

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে একশ' এর বেশি প্রতিষ্ঠান। আর লেনদেন বেড়ে তিনশ' কোটি টাকার ওপর উঠেছে
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভোটের আগে ইতিবাচক শেয়ারবাজার

নতুন বছর ২০২৪ সালের প্রথম তিন কার্যদিবস টানা দরপতন হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে শেষ কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে নেতিবাচক ধারায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। নতুন বছর ২০২৪ সালের শুরুতেও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়।

ক্রেতা সংকট দেখা দেয়ায় বুধবার ডিএসইতে লেনদেন কমে ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে যায়। তবে ভোটের আগে শেষে কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিক্রির চাপ কিছুটা কমে। এতে লেনদেনের গতি খুব বেশি না বাড়লেও দাম বাড়ার তালিকায় চলে এসেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে এক'শ এর বেশি প্রতিষ্ঠান। আর লেনদেন বেড়ে তিন'শ কোটি টাকার ওপর উঠেছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও বেড়েছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এর জেরেই দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে হাতে নগদ টাকা রাখার চেষ্টা করে। এ কারণে বিক্রির চাপ বেশি থাকায় দরপতন হয়। তবে ভোটের আগে শেষ কার্যদিবসে সেই বিক্রির চাপ কিছুটা কমে এসেছে। এখন ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেলে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ না হলে ভোটের পর বাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের সময় আধঘণ্টা পার হওয়ার আগেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। ফলে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ১ পয়েন্ট কমে যায়।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের দুই ঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩ পয়েন্ট পয়ে যায়। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে বাজার চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩টির। আর ১৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্‌ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৪৫ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯২ কোটি ১৪ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ভোট ঘিরে দেশে এক ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর কারণে দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার নেতিবাচক ছিল। বৃহস্পতিবার বাজারের চিত্রি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে বিক্রির চাপ কিছুটা কমে এসেছে। এখন নির্বাচন ভালোভাবে হয়ে গেলে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ভোটের পর শেয়ারবাজার যথেষ্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ভোট ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ভোটের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তারা আবার শেয়ারবাজারে সক্রিয় হতে পারন। এটি হলে বাজার বিক্রির চাপ কমার পাশাপাশি, ক্রেতাও বাড়বে। ফলে লেনদেন ও সূচক সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ১৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক এক্সেসরিজ।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-ইয়াকিন পলিমার, ওরিয়ন ইনফিউশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, এমারেল্ড অয়েল, স্টান্ডার্স ইন্সু্যরেন্সের, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৬টির এবং ৯৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে