শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসহ আরো ৬জন গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৪ মে ২০২১, ১৭:৫৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মসূচী চলাকালে শহরজুড়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বিন ছানাউল্লাহ-(৩৫) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র খেলাফত কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী দাওয়া বিষয় সম্পাদক মীর মাসুম ইয়ার মিম-(২৮)সহ আরো ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

সোমবার বিকেল থেকে আজ মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনিয়ে জেলার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৫৬টি মামলায় মোট ৪১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাওলানা মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বিন ছানাউল্লাহ জেলার বাঞ্চারামপুর উপজেলার দড়িয়াদৌলত ইউনিয়নের মরিচাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ ছানাউল্লাহর ছেলে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শিক্ষক এবং গ্রেপ্তারকৃত মীর মাসুম ইয়ার মিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার শেরপুর গ্রামের মীর এরশাদ মিয়ার ছেলে।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত মাওলানা মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বিন ছানাউল্লাহ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসাসহ আশপাশ মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ তান্ডব চালায়।

অপর দিকে র‌্যাব-১৪-এর ভৈরব ক্যাম্প থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা জয়, গ্রেপ্তারকৃত মীর মাসুম ইয়ার মিম গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতের কর্মসূচী চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডব, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের অন্যতম আসামী।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ রইছ উদ্দিন বলেন, সহিংস ঘটনাগুলোর স্থির চিত্রও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়।

এ সকল মামলায় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ হাজার লোককে আসামী করা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত ৪১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।

উল্লেখ্য মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়।

এসময় হামলাকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পৌরসভা কার্যালয়, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, মাতৃ সদন, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, পৌর মেয়রের বাসভবন, সার্কিট হাউজ, হাইওয়ে থানা ভবন, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাম্পাস, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি, বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরিতে পরিনত করে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে