শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ৩০ জুলাই ২০২১, ১৯:৫৩

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পৌরশহর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির ধাক্কায় বাঁধটির টলমলে অবস্থা। ফাটল ধরেছে বাঁধে। যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে বাঁধটি।

গত একসপ্তাহে অন্তত ৫০ গজ ভূমিসহ ছয়টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শহর রক্ষা বাঁধের অপর পাশের বাসিন্দারা রয়েছে চরম আতংকে। নারী-পুরুষ এককাট্টা হয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। ভাঙ্গন বাঁধ পর্যন্ত পৌছে যাওয়ায় আতংক আরও বেড়ে গেছে তাদের। ফলে শতাধিক ঘরের সদস্যরা মালামাল অন্যত্র নিয়ে গেছে। এই আতংকময় দৃশ্য বিরাজ করছে চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের দিগরপানখালী গ্রামে। শুক্রবার বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানা চারদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি তোড়ে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরে বাঁধের একটি অংশে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে বাঁধ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দরা। পরে স্থানীয় এমপি ও মেয়রসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের খবর দেন। সাথে সাথে তারা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তার বালির বস্তা ও মাটি ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালায়। এদিন রাতে কোন রকমে বাঁধটি রক্ষা করা হলেও কতক্ষণ ঠিকে থাকবে এই বাঁধ তা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।

এ সময় বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গন ঠেকাতে বর্ষার আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় বাঁধ সংলগ্ন লোকজনদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নদীর তীরে ব্লক, বালি দেয়ার কথা থাকলেও ব্লক দেয়া হয়নি। ভাঙ্গন শুরু হলে নিকটস্থ বিভিন্ন বাসিন্দাদের সহায়তার বালির বস্তা ও মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা অল্প পানির ধাক্কায় বাঁধ পানিতে ভেসে যায়। ফলে, সড়ক কাম বাঁধে ফাটল ধরেছে। যেকোন মহুর্তে ওই বাঁধ ভেঙ্গে পৌরশহর ও পার্শ্ববর্তী ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এহেছানুল হক বলেছেন, জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে ঠিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা না হলে শতশত পরিবার আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে বসবে। আর এসব আশ্রয়হীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের জোর দাবি জানান। স্থানীয়ভাবে লোকজনের সহায়তায় বালির বস্তা বাঁধের উপর ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, পৌরশহর রক্ষা বাঁধটি ভাঙ্গার খবর পেয়ে রাতেই পরিদর্শন করেছি। এই বাঁধ রক্ষার জন্য সব কিছু করা হবে। ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি বর্তমানে খুবই হুমকির মুখে। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধের অর্ধেক অংশ পানির স্রোতে ভেসে গেছে। বাঁধটি রক্ষা জন্য সারারাত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছি। এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পৌরশহরে ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক টিকিয়ে রাখাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, বাঁধ ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাঁধটির বিষয়ে ডিসি স্যারকে অবহিত করেছি। বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, রাতে খবর পেয়ে বাঁধটি রক্ষা জন্য চেষ্টা চালিয়েছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এই বাঁধ ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলবো। ইতোমধ্যে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বাঁধটি দেখে গেছেন। বাঁধটি রক্ষার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে