ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল আসা বন্ধ হচ্ছে না। উপরন্তু বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। তারওপর যোগ হয়েছে কালবৈশাখি ঝড়। তাই সিলেট নগরে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন ও পানিবন্দি ভানভাসি মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। সিলেট জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে কিছু এলাকার বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি নরম হয়ে হেলে পড়েছে। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ভোরের ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালার ডাল ভেঙে বিদ্যুতে তারে পড়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। তাই জেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। সিলেট নগরীতে অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাহক এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গেল দুইদিন ধরে। সিলেটে বরইকান্দি সাবস্টেশন ও শাহজালাল উপশহরে একটি ফিডার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব স্টেশন পুরো চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর মূল সড়কে কোমর সমান পানি। প্রাইভেটকার,অটোরিকশা (সিএনজি) বা রিকশা দিয়ে চলাচল করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও মধ্যরাস্তায় গিয়ে পানিতে আটকে যাচ্ছেন।এমন অবস্থায় উপশহরের কয়েকটি ব্লকে দেখা মিললো নৌকা।গতকাল বিকেল থেকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা।
ওই এলাকার বাসিন্দা শ্রাবণী দাস বলেন, কলেজের কাজে বের হয়েছিলাম।কিন্তু রাস্তায় যে পরিমাণ পানি রয়েছে তাতে গাড়ি দিয়ে যেতে পারছি না।তাই বাধ্য হয়ে নৌকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সালেহ আহমদ নামের আরেকজন বলেন, এই মূহুর্তে নৌকাই আমাদের চলাচলের একমাত্র বাহন।সকাল থেকে অনেকেই নৌকা দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন।
সিসিকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সিলেট ফিরেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মহানগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, পরবর্তি ঘোষণার আগ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব ধরণের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারি নাগরিকদের খাবার সংকট, পয়ঃসুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে সিসিকের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে বলেও জানান সিসিক মেয়র।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন্যা কবলিত নগরীর এলাকাগুলোতে খাবার পানির সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লাবিত এলাকার পানিবন্দী মানুষের দোরগোড়ায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা পাঠানো হয়েছে। খাবার পানির সংকট নিরসনে সিসিকের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বাড়ানো হবে আশ্রয় কেন্দ্র।
এদিকে উপশহর ছাড়াও নগরীর ছড়ারপার, সিলেট সার্কিট হাউস-তালতলা ভিআইপি রোডের তালতলা, সোবহানীঘাট, কলাপাড়া, শামিমাবাদ আবাসিক এলাকা,বাঁধেরমুখ, গোটাটিকর, সাদাটিক, শাপরাণ, কালিঘাট, বেতবাজার, তেরতন, শাহজালাল উপশরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী রয়েছে মানুষ।
এদিকে, বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। পানির নিচে তলিয়ে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে আছেন মানুষ। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে অনেকে তাদের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যস্থানে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। প্লাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ঔষধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় এসব উপজেলায় মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনও তা বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ২৫২টি বন্যার্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সরকার বানভাসিদের ভোগান্তি কমাতে পাশে আছে।’
যাযাদি/এস