রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ, বসানো হয়েছে ১৮ স্প্যান 

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৫

দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু নির্মিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর বুকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩শ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরী হওয়া পিলার গুলোর উপর স্প্যান বসানো কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দিন রাত কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের বড় বড় স্টিলের পাটাতন দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে স্প্যান গুলো। এটি তৈরী করা হচ্ছে ওয়েদার ষ্টিল দিয়ে। যা দেশের রেল সেতুতে এই ধরনের ষ্টিল ব্যবহার এই প্রথম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর ইতিমধ্যে ১৮টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে সেতুর ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্প্যান এখন দৃশ্যমান। ১৯ তম স্প্যানের কাজ চলছে। ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যানে তৈরী হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর কাজ শেষ হলে ১২০ কিলোমিটার গতিতে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে এই রেল সেতু দিয়ে। এই রেলসেতু বাস্তবায়িত হলে আমদানি রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে।

২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে করোনার কারনে ও মালামাল সরবরাহ দেরি হওয়ায় সেতুর পশ্চিম অংশের কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। তারপরও কিছু ফিনিশিং কাজ আছে। এখানে গ্যাস পাইপ লাইন ইনষ্টল করবে। সব মিলিয়ে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ব্রীজটি চালু হবে বলে জানিয়েছে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো: মাসুদুর রহমান।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর অগ্রগতি এখন ৬৫ পার্সেন্ট। ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান দ্বারা এই ব্রীজ নির্মিত হচ্ছে। ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১টি পিলারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ১৯ টি পিলারে কংক্রিটের কাজ চলছে। আর ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ১৮টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ১৯ তম স্প্যানের কাজ চলমান।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিম ষ্টেশনে কানেক্ট করার কাজ চলমান রয়েছে। এটি যেহেতু ডাবল লাইন ব্রীজ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে সে জন্য ইয়াডের কাজটি সম্পূর্ণ মোডিফাই করা হচ্ছে। দুই পাশেন ইয়াডের কনষ্ট্রাকশনের কাজ শুরু করা হয়েছে। আর এ্যাপ্রোচের দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটারের মতো ট্র্যাক আছে এটির মাটির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সাব গ্রেট ও সাব ব্যলাষ্টের কাজ চলছে। দুই পাশে ষ্টেশন বিল্ডিং এর কাজ ও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সব কিছু প্লান অনুযায়ী চলছে। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। যখন ঈশ্বরদী থেকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন হবে তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ঈশ্বরদী থেকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন প্রকল্পটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। জায়কার অর্থায়নে প্রকল্পটি পরবর্তীতে হাতে নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টদের দাবী এই নতুন স্টিল ব্যবহারের কারনে স্প্যান গুলো আলাদা ভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। বলা হচ্ছে এর ফলে আগামী ১শ বছরেরও সেতুর কাঠামোতে মরিচা ধরবে না। সময়ের সাথে সাথে গাডারের উজ্জলতাও বাড়বে। এছাড়াও এই সেতুতে স্পার ছাড়াও বিশেষ পদ্ধিতে বসানো হবে রেল ট্র্যাক। এতে ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে চলবে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন।

এতে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের গতি বাড়বে। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় রেল সেতু প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করছে জায়কা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়।

তবে ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিন লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। এর থেকে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকৃত ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করে ২০ কিলোমিটার বেগে। ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই প্রান্তে ষ্টেশনে উঠার আগে চেকিং করতে হয়।

এতে প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। এই ব্রীজ দিয়ে মাত্র ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ডাবল গেজ ডুয়েল লেন সেতু দিয়ে দিনে ৮৮টি ট্রেন ১২০ কিলোমিটার গতি নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তাতে সময় কম লাগবে। মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী-চট্রগ্রামের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এই সেতু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল হক বলেন, সেতুর উপর রেল লাইনের কাজ অনেকটা সেনসেটিফ। সুষ্ট ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা অব্যাহত রেখেই আমাদের কাজ পরিচালিত করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে